সম্প্রতি, “হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য” শীর্ষক শিরোনামে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি দুটি সংবাদপাঠের ভিডিও এবং ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই-১
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর “১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা | United States Sanctions | USA | Channel 24” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে আফগানিস্তান, চীন, ইরান, সুদান ও উগান্ডাসহ মোট ১৩টি দেশের ৩৭ জন ব্যক্তির ওপর অর্থনৈতিক ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে উক্ত প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ৩৭ জন ব্যক্তির তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিও যাচাই-২
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Jamuna TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর “যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা; কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর? | Impact of US Ban” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে র্যাবের সাবেক ও তৎকালীন ৭ কর্মকর্তারা ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
অর্থাৎ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব) এর ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার পুরোনো সংবাদের ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই-৩
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে The Daily Star এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি “যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চোখে নির্বাচন অবাধ হয়নি, শেখ হাসিনাকে মোদির অভিনন্দন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়া ও ভোটের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশ দুটি।
অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবির সাথে উক্ত ভিডিওটি অপ্রাসঙ্গিকভাবে জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবির সত্যতা জানা যায়নি।
তবে, দৈনিক যুগান্তরে ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবির বিষয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত বছরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে দেশটিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি “হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ যুক্ত করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবির ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বেও চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কয়েকটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Channel 24: “১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা | United States Sanctions | USA | Channel 24”
- Jamuna TV: “যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা; কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর? | Impact of US Ban”
- The Daily Star: “যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চোখে নির্বাচন অবাধ হয়নি, শেখ হাসিনাকে মোদির অভিনন্দন”
- দৈনিক যুগান্তর: “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র”