সম্প্রতি, “১৫০ কেজি ওজনের গলদা চিংড়ি” শীর্ষক শিরোনামে বিশালাকার একটি প্রাণীর ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরূপ কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচ্য ছবিটি চিংড়ি মাছের কোনো বাস্তব ছবি নয় বরং বিশালাকৃতির এই চিংড়ির ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
শুরুতেই, সবচেয়ে বড় আকৃতির ক্রাস্টেসিয়ান প্রাণীর (চিংড়ি এবং লবস্টার এই পরিবারভুক্ত প্রাণী) বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার।
কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমেরিকান ওশেনের ওয়েবসাইটে “The Largest Lobster Ever Recorded” শীর্ষক শিরোনামের একটি নিবন্ধ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ধরা পড়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের লবস্টারের ওজন ছিল ৫১.৫ পাউন্ড বা ২৩.৩৬ কেজি। ১৯২৬ সালে ধরা পড়া এই লবস্টারটিই এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় আকারের ক্রাস্টেসিয়ান জাতীয় প্রাণী।
এছাড়াও, ১৯৭৭ সালে নোভা স্কটিয়ার সামুদ্রিক এলাকায় ধরা পড়া একটি আমেরিকান লবস্টার তালিকার দুই নম্বরে রয়েছে। যার ওজন ছিল প্রায় ৪৪ পাউন্ড বা ২০.১৪ কেজি।

পাশাপাশি, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ওয়েবসাইটেও এখন পর্যন্ত ধরা পড়া সবচেয়ে বড় আকৃতির ক্রাস্টেসিয়ান প্রাণীর রেকর্ডটি রয়েছে আমেরিকান লবস্টারের দখলে। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্যমতে, ১৯৭৭ সালে ধরা পড়া পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রাস্টেসিয়ানের ওজন রেকর্ড করা হয়েছিল ২০.১৪ কেজি বা ৪৪ পাউন্ড।

তবে ১৫০ কেজি ওজনের চিংড়ি বা অন্য কোনো ক্রাস্টেসিয়ান জাতীয় প্রাণী ধরা পড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন গণমাধ্যম ‘Buzz Feed News’ এ গত ০১ ফেব্রুয়ারি “Why Are AI-Generated Hands So Messed Up?” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরিকৃত ছবি সমূহে অসংলগ্ন হাতের আকার দেখতে পাওয়া যায়। হাতের আঙুলের আকারও সঠিকভাবে চিত্রায়ণ করতে পারে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরিকৃত ছবিসমূহে প্রায়শই দেখা মেলে অসংলগ্ন হাত কিংবা আঙুলের আকৃতি।

Buzz Feed News এর প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া চিংড়ি মাছের ছবিটি বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাছের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের হাতের আঙুল মানুষের বাস্তব হাতের আঙুলের মত নয়। যা নির্দেশ করে যে ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি।

এছাড়াও, ফুড এন্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (FAO) এর ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত গলদা চিংড়ি মাছের (Macrobrachium rosenbergii) শারীরিক গঠন বিশ্লেষণ করে আলোচ্য ছবির সাথে বিভিন্ন বৈসাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন:
১. গলদা চিংড়ির ক্যারাপেস (মস্তক) কিংবা অ্যাবডোমেন (উদর) অঞ্চলে আলোচ্য ছবির মত খাড়া একজোড়া অ্যান্টেনা সদৃশ কোন উপাঙ্গ থাকে না।
২. সাধারণত গলদা চিংড়ির রোস্ট্রামটি(মস্তকের অগ্রভাগের খাজকাটা সূঁচালো অঙ্গ) উপরের দিকে ঈষৎ বাঁকা হলেও আলোচ্য ছবিতে রোস্ট্রামটি নিচের দিকে বাঁকানো।

মূলত, বিশালাকৃতির একটি ক্রাস্টেসিয়ান জাতীয় প্রাণীর ছবিকে ১৫০ কেজি ওজনের চিংড়ি মাছের বাস্তব ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে আলোচ্য ছবিটি চিংড়ি মাছের বাস্তব কোনো ছবি নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও পোপ ফ্রান্সিসের এআই জেনারেটেড ছবিকে বাস্তব দাবিতে প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বিশালাকৃতির চিংড়ি মাছের ছবিকে বাস্তব ছবি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- American Ocean: “The Largest Lobster Ever Recorded”
- Guiness Book of World Records
- Buzz Feed News: “Why Are AI-Generated Hands So Messed Up?”
- FAO: Macrobrachium rosenbergii
- Rumor Scanners Own Analysis