শিক্ষাছুটিতে থাকা কুবি শিক্ষকদের সংখ্যা নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য

সম্প্রতি, “২৬৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬৫ জন ছুটিতে” শীর্ষক শিরোনামে গণমাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদটিতে যা দাবি করা হচ্ছে

  • বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যসূত্র উল্লেখ করে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৬৬ জন শিক্ষক আছেন এবং এর মধ্যে ৬৫ জন শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন।
  •  ইউজিসির প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ২৬৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। যার মানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত ২৪:১ এবং দায়িত্বরত শিক্ষকের সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত ৩২:১।

গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনটি দেখুন ‘রাইজিং বিডি’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১ কে তথ্যসূত্র উল্লেখ করে গণমাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও অনুপাত নিয়ে প্রকাশিত তথ্যগুলো সঠিক নয় বরং প্রতিবেদনটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যার তথ্যগুলো সাংঘর্ষিক। 

পুরানো সূত্র উল্লেখ করে নতুন তথ্য প্রচার 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনটির পিডিএফ খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: UGC 48th Annual Report 2021

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ৪৮ তম বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২১ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা ছিলো ২৬৬ জন। এর মধ্যে সেই সময়ে শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন ৫৭ জন শিক্ষক।

Screenshot: UGC 48th Annual Report 2021

পরবর্তীতে বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা সম্পর্কে অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে  ২৬৫ জন শিক্ষক রয়েছেন।  

Screenshot from Comilla University Website

অপরদিকে বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকের সংখ্যা অনুসন্ধানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালে প্রকাশিত একাডেমিক ডায়েরি ঘেটে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৬৫ জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে ৬৪ জন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন।

অর্থাৎ, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনটি ইউজিসির ২০২১ সালে প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে করা হলেও এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ২০২৩ সাল বা বর্তমান সময়ের তথ্য, যার সঙ্গে ইউজিসির প্রতিবেদনটির কোনো মিল নেই।

মোট শিক্ষার্থী ও দায়িত্বরত শিক্ষকের অনুপাত নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য 

গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ৬ হাজার ৩৮৪ জন এবং এর বিপরীতে কর্তব্যরত শিক্ষকের সংখ্যা ২০৩ জন উল্লেখ করা হয়েছে। এই হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত দেখানো হয়েছে ৩২:১। 

Screenshot: UGC 48th Annual Report 2021

কিন্তু অনুসন্ধানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ‘cou.ac.bd’ এর হালনাগাদকৃত প্রাপ্ত তথ্য অনু্যায়ী,  বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে মোট ৭ হাজার ১৪১ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন এবং শিক্ষকের সংখ্যা ২৬৫ জন। 

Screenshot from Comilla University Website

তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন একাডেমিক ডায়েরি সূত্রে এই ২৬৫ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষাছুটিতে থাকা শিক্ষকের সংখ্যা ২০১ জন। ফলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের এবং অনুপাত দাঁড়ায় ৩৬:১। 

অর্থাৎ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনটির সঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও এদের অনুপাত ঠিক নেই। 

মূলত, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত ৩০ মার্চ তাদের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ৪৮ তম বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১ প্রকাশ করে৷ এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে “২৬৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬৫ জন ছুটিতে” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিবেদনটি ইউজিসির প্রতিবেদন সূত্রে করা হলেও ঐ প্রতিবেদনের সাথে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তথ্যের গড়মিল রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবেদনটিতে এমন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে যা ইউজিসির প্রতিবেদনটিতে বিদ্যমান নেই এবং কোথাও কোথাও ২০২২ সালে প্রকাশিত ইউজিসির প্রতিবেদনের তথ্যকেই বর্তমান সময়ের তথ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের পুরানো তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সংখ্যা ও এদের অনুপাত নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img