সম্প্রতি ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলো হাসিনা’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দেননি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওটি তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
গত এপ্রিল Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলো হাসিনা’ শীর্ষক থাম্বনেইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের ছবি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি দিলো হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনামে উক্ত ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার একই ভিডিও ক্লিপের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের ছবি সহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের সময়কার কয়েকটি পুরোনো ছবি দেখা যায়।
১ মিনিট ০৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি’র শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ অধিবেশনে সম্প্রতি বক্তব্য রাখার একটি ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিওটির পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই প্রধানমন্ত্রী। আজকে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের সরকারকে হটাতে পারে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দিলো শেখ হাসিনা, যাতে জনগণ তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রার্থী নির্বাচিত করে ক্ষমতায় বসাতে পারে।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ভিডিওটির কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, ভিডিওটি শুরুর ১৬ সেকেন্ড গত ১০ এপ্রিল ‘আমেরিকা গণতন্ত্রের চর্চা করে আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও ভিডিওটি থেকে নেওয়া কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, সেগুলো অনেক পুরোনো প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি। ভিডিওটি’র ৫০ সেকেন্ডের সময় প্রদর্শিত একটি ছবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সভায় বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে উক্ত ছবিটি মূল ধারার গণমাধ্যম ইত্তেফাকের অনলাইন সংস্করণে গত ৩১ জানুয়ারি ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে; প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি রংপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি মূল ধারার গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো সূত্রে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছে দাবি করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন দেননি।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Somoy TV on YouTube: আমেরিকা গণতন্ত্রের চর্চা করে আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত: প্রধানমন্ত্রী
- Ittefaq: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে; প্রধানমন্ত্রী
- Rumor Scanner Own Analysis