সম্প্রতি, পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠার আদলে তৈরি কিছু ছবির সাথে সংযুক্ত ক্যাপশনে ছবিগুলো সপ্তম শ্রেণীর (ষষ্ঠ শ্রেণীর দাবিও রয়েছে) ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত ছবিগুলো সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
উক্ত ছবিগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ফেসবুকের একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিগুলো পাঠ্যবইয়ের নয় বরং মূল পাঠ্যবইয়ের সাথে প্রচারিত ছবিগুলোতে থাকা বইয়ের পাতার মিল নেই।
বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ের ভুলের বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বত্র বেশ আলোচনা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি মাধ্যমিকের দুই শ্রেণীর (ষষ্ঠ ও সপ্তম) পাঠ্যবইয়ের ছবি দাবিতে কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এমন একটি ছবি দেখুন –
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বই দুইটি। একটি হচ্ছে অনুসন্ধানী পাঠ এবং অন্যটি হচ্ছে অনুশীলন বই।
একইভাবে সপ্তম শ্রেণীরও ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বই দুইটি। একটি হচ্ছে অনুসন্ধানী পাঠ এবং অন্যটি হচ্ছে অনুশীলন বই।
ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুসন্ধানী পাঠ বই যাচাই করে দেখা যায়, আলোচিত ছবিগুলোর সাথে পাঠ্যবইটির কোনো মিল (লেখার ফন্ট, ডিজাইন, ছবি উপস্থাপন) নেই।
বইটির একটি পৃষ্ঠার নমুনা ছবি দেখুন –
পরবর্তীতে ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বই যাচাই করে দেখা যায়, আলোচিত ছবিগুলোর সাথে পাঠ্যবইটির কোনো মিল (লেখার ফন্ট, ডিজাইন, ছবি উপস্থাপন) নেই।
বইটির একটি পৃষ্ঠার নমুনা ছবি দেখুন –
সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুসন্ধানী পাঠ বই যাচাই করে দেখা যায়, আলোচিত ছবিগুলোর সাথে পাঠ্যবইটির কোনো মিল (লেখার ফন্ট, ডিজাইন, ছবি উপস্থাপন) নেই।
বইটির একটি পৃষ্ঠার নমুনা ছবি দেখুন –
পরবর্তীতে সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বই যাচাই করে দেখা যায়, আলোচিত ছবিগুলোর সাথে পাঠ্যবইটির কোনো মিল (লেখার ফন্ট, ডিজাইন, ছবি উপস্থাপন) নেই।
বইটির একটি পৃষ্ঠার নমুনা ছবি দেখুন –
অর্থাৎ, ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো কেউ ষষ্ঠ এবং কেউ-বা সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের ছবি দাবি করলেও আদতে কোনো দাবিই সঠিক নয়।
ছবিগুলোর সূত্রপাত কীভাবে?
ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছবিগুলোর উপরের দিকে এক কোণায় ‘সহমত ভাই 0.2’ নাম লেখা একটি লোগো এবং নিচের দিকে একই নামে টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট নাম দেখা যাচ্ছে।
পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘সহমত ভাই 0.2’ নামক ফেসবুক পেজে গত ০৪ জানুয়ারী প্রকাশিত আলোচিত ছবিগুলো (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবি সম্বলিত পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে,”আমাদের অসাম্প্রদায়িক প্রগতিরা সপ্তম শ্রেনীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইতে যেসকল ইতিহাস তুলে ধরতে ভুলে গেছেন।”
অর্থাৎ, ক্যাপশন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ছবিগুলো পাঠ্যবইয়ের নয়। তবে এই ছবিগুলোকে পাঠ্যবইয়ের দাবি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
মূলত, সম্প্রতি ‘সহমত ভাই 0.2’ নামক ফেসবুক একটি পেজে কিছু এডিটেড ছবি শেয়ার করে “আমাদের অসাম্প্রদায়িক প্রগতিরা সপ্তম শ্রেনীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইতে যেসকল ইতিহাস তুলে ধরতে ভুলে গেছেন।” শীর্ষক ক্যাপশনে ছবিগুলো ‘পাঠ্যবইয়ে থাকতে পারত’ শীর্ষক মন্তব্য করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ছবিগুলোকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের দাবি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো কেউ ষষ্ঠ এবং কেউ-বা সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের ছবি দাবি করলেও উক্ত বইগুলোর পৃষ্ঠার সাথে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোর কোনো মিল পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, ছবিগুলো পাঠ্যবইয়ের শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, পাঠ্যবইয়ে থাকা ভুলের বিষয়ে পাঁচটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বইয়ের পৃষ্ঠার আদলে বানানো এডিটেড কিছু পৃষ্ঠার ছবিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের দাবি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান: অনুসন্ধানী পাঠ
- ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান: অনুশীলন বই
- সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান: অনুসন্ধানী পাঠ
- সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান: অনুশীলন বই
- সূত্রপাত : সহমত ভাই 0.2