সম্প্রতি “বাংলাদেশের ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক রায়। সনাতনী/হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন ছেলে বা মেয়ে ধর্মান্তরিত হলে পিতা ও মাতার স্থাবর অস্থাবর সম্পতির ভাগ পাবে না। যুগোপযোগী বিচারিক রায় প্রদান করলেন বিচারপ্রতি শ্রী কৃষ্ণা দেবী।” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ হিন্দুদের ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রেক্ষিতে উত্তরাধিকার সম্পত্তি না পাবার ব্যাপারে কোনো রায় দেননি এবং এই সংক্রান্ত কোনো আইনও নেই বরং হিন্দু অধিকার আইন শীর্ষক একটি অনলাইন ওয়েবিনারে বাংলাদেশ সরকারের ১৯৭৩-এর ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন গ্রহণ না করার প্রেক্ষিতে ধর্মান্তরিত নারী-পুরুষ সম্পত্তির অধিকার হারাবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ২০২১ সালের ৪ মার্চ “ধর্মান্তরিত হলে হিন্দু নারী-পুরুষ সম্পত্তির অধিকার হারাবেন: বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
অর্থাৎ, বাংলাদেশ লজ রিভিশন অ্যান্ড ডিক্লারেশন অ্যাক্ট ১৯৭৩-এ ধর্মীয় স্বাধীনতার উল্লেখ না থাকায় উক্ত আইনের কারণে পূর্বে থেকেই ধর্মান্তরিত নারী-পুরুষ উত্তরাধিকার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবেন। উক্ত বিষয়টি বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৯৭৩ সাল থেকেই প্রচলিত। বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ উক্ত আইনের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেন। তবে তিনি উক্ত আইনের কোনো রায় দেন নি।
পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যম RTV-র অনলাইন সংস্করণে ২০২১ সালের ৪ মার্চ “ধর্মান্তরিত হলে হিন্দু নারী-পুরুষ সম্পত্তির অধিকার হারাবেন” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়,
মূলত, ২০২০ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত হিন্দু খসড়া আইন ২০২০ শীর্ষক একটি অনলাইন ওয়েবিনারে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বাংলাদেশ লজ রিভিশন অ্যান্ড ডিক্লারেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর প্রেক্ষিতে একটি মন্তব্য করেন। উক্ত ওয়েবিনারে তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ লজ রিভিশন অ্যান্ড ডিক্লারেশন অ্যাক্ট আইনে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে উল্লেখ না থাকায় ধর্মান্তরিত হিন্দু নারী-পুরুষ উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। উক্ত বক্তব্যকেই অতিরঞ্জিতভাবে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ধর্মান্তরিত হিন্দু নারী-পুরুষ উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আদালতে রায় দিয়েছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৯ অক্টোবর অবসরে যান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সুপ্রিম কোর্টের তৃতীয় নারী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
সুতরাং, ধর্মান্তরিত হিন্দুদের সম্পদের বন্টণ নিয়ে বিচারক কৃষ্ণা দেবনাথের ব্যক্তিগত মন্তব্যকে এটি তার দেওয়া আদালতের রায় দাবিতে অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।