শিক্ষিকাকে বাচ্চা নিতে হলে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি লাগবে শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি “কোনো শিক্ষিকাকে বাচ্চা নিতে হলে অনুমতি লাগবে প্রধান শিক্ষকের!” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষিকার সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি লাগবে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং নওগাঁর মহাদেবপুরে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমন মন্তব্য করেছেন অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার তথ্য গণমাধ্যমে চটকদার শিরোনামে প্রচার করায় উক্ত বিভ্রান্তি সূত্রপাত হয়। তাছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আদালত কিংবা সরকার থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

গুজবের সূত্রপাত

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী “কোনো শিক্ষিকা বাচ্চা নিলে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিতে হবে!” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Jugantor website 

পরবর্তীতে উক্ত শিরোনামটি কপি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে প্রচার করা হয়। যা থেকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।

Collage: Rumor Scanner 

তথ্যযাচাই

উক্ত প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শিরোনামে “কোনো শিক্ষিকা বাচ্চা নিলে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিতে হবে!” শীর্ষক দাবি থাকলেও বিস্তারিত অংশে সরাসরি উক্ত দাবির ভিত্তি পাওয়া যায়নি। 

Screenshot from Jugantor Website

প্রতিবেদনটির বিস্তারিত অংশে দেখা যায়,

“নওগাঁর মহাদেবপুরে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কোনো শিক্ষিকা সন্তান (বাচ্চা) নিলে অনুমতি নিতে হবে বলে হুমকি দেন ওই প্রধান শিক্ষক!এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।”

অর্থাৎ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের একটি অংশ শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে প্রতিবেদনের ভিতরের অংশে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে চটকদার শিরোনামে উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রচার করায় উক্ত শিরোনামটি কপি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে প্রচার করা হয়। যা থেকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, অনলাইন গণমাধ্যম Bangla Insider এ গত ১৮ ফেব্রুয়ারী “প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

Screenshot from Bangla Insider website 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, 

“নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চকরাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসাইন এর বিরুদ্ধে সহকারি শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকারা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।”

এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়,

“শিক্ষিকরা অভিযোগ করেন, কোন শিক্ষিকা কখন বাচ্চা নেবেন তাও প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে নিতে হবে, কোন শিক্ষিকা বদলী হতে চাইলে তাদের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে যে প্রতিষ্ঠানে যাবে সেখানে গিয়ে বিয়ে করতে বলেন। এমনকি নিজেকে বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন প্রধান শিক্ষক।”

যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, উক্ত শিক্ষকের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংবাদ প্রচার করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এরকম কোনো আইন বা নীতি প্রনয়ণ করা হয়নি।

এছাড়াও, অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং মূলধারার গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করেও উক্ত দাবির কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

মূলত, নওগাঁর মহাদেবপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার স্কুলের শিক্ষিকাদের সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে তার (প্রধান শিক্ষকের) অনুমতি লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন দাবি করে উক্ত বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষিকা অভিযোগ করেছেন। শিক্ষিকার উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। তবে উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনে “কোনো শিক্ষিকাকে বাচ্চা নিতে হলে অনুমতি লাগবে প্রধান শিক্ষকের!” শীর্ষক শিরোনাম ব্যবহার করা হলে উক্ত শিরোনামের সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে।

সুতরাং, নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক তার স্কুলের এক শিক্ষিকাকে মন্তব্যের অভিযোগের তথ্যকে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ ব্যতীত চটকদার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img