সিলেটে এমসি কলেজ মাঠে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের শেষ দিনে গত ১১ জানুয়ারি বয়ান করেন ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারি। উক্ত মাহফিলের কারণে নিকটবর্তী গোপাল টিলা শিব মন্দির পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় শীর্ষক একটি দাবিতে কতিপয় ছবি ভারতীয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন নিউজ১৮ বাংলা (ইউটিউব)।

একই দাবিতে এক্সের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে প্রচারিত একই দাবির পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই দাবির পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটের আলোচিত মাহফিলে ড. মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারির বয়ানের কারণে পার্শ্ববর্তী গোপাল টিলা শিব মন্দির কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত মন্দির প্রাঙ্গনে সরস্বতী প্রতীমা তৈরি করা হচ্ছে, যা কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং শিশু-কিশোরদের অযাচিত কৌতূহল এড়াতে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবু্কে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী হাসান আল মাহমুদের অ্যাকাউন্টে আজ দুপুরে দেওয়া একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিগুলো সিলেটের গোপাল টিলা মন্দিরের। মূলত সরস্বতীর প্রতিমা তৈরি উপলক্ষে মন্দিরটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। যাতে করে কুয়াশায় প্রতিমাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
জনাব মাহমুদ জানান, ওয়াজের ৩ দিন আগ থেকেই প্লাস্টিক টাঙ্গানো হয়েছে, ওয়াজ মাহফিল শেষ হয়ে গেলেও প্লাস্টিকগুলো এখনও সেখানে আছে এবং আরও কয়েকদিন থাকবে।

পাশাপাশি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থ জনাব মাহমুদকে জানান, আলোচিত দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা। প্রতিমা তৈরির জন্য কারিগর নিজেই এই প্লাস্টিক টাঙ্গিয়েছেন।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হাসান আল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। মাহমুদ উক্ত মন্দিরের একাধিক ছবি এবং পূজা মণ্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের একটি ভিডিও বার্তা রিউমর স্ক্যানারকে সরবরাহ করেন। প্রদত্ত ভিডিও বার্তাতেও পূজা মণ্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদককে একই কথা বলতে শোনা যায়।

এ বিষয়ে আরো জানতে পরবর্তীতে গোপাল টিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপ-এর সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থ-এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ইন্টারনেটে যে দাবিটি করা হয়েছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করেই ভিত্তিহীনভাবে এই কাজটি করা হয়েছে। মূলত, স্থানীয় একজন কারিগর নামমাত্র মজুরিতে সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করে আশেপাশের পূজামন্ডপগুলোতে সেগুলো বিক্রি করেন। যেহেতু আমাদের মন্দিরে নিরাপত্তা ভালো, তাই আমরা তাকে এখানে প্রতিমা তৈরির জন্যে জায়গা দিয়েছি। শীতকালের কুয়াশার কারণে প্রতিমা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং শিশু-কিশোরদের অযাচিত কৌতূহল এড়াতে কারিগর নিজেই মন্দিরের চারপাশ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, মাহফিলের মাইকের কারণে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটি জানতে চেয়ে বরং তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। প্রয়োজনে মাইক সরিয়েও দিতে চেয়েছেন তারা। সেখানে এমন দাবি উভয় পক্ষের জন্যেই ক্ষতিকর।
অর্থাৎ, গোপাল টিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সাথে সিলেট এমসি কলেজ মাঠে আয়োজিত মাহফিলের কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, কুয়াশায় নির্মানাধীন সরস্বতী প্রতীমা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষার জন্যে মন্দির পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ঘটনাকে মিজানুর রহমান আজহারির মাহফিলের জন্যে মন্দির ঢেকে দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Hasan Al Mahmud Facebook Account Post
- Statement of Gopal Tila Temple Committee Secretary Himadri Kar Purkayastha
- Rumor Scanner’s Analysis