তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে ভক্তদের অগ্নিসংযোগের দাবিটা ভুয়া

গত ২৫ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপের সেমিফাইনালের ম্যাচে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপরীতে মাঠে নামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পাকিস্তানের ১৩৫ রানের টার্গেটে মাত্র ১১ রানের ব্যবধানে ১২৪ করে ঘরে ফেরে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে তাওহিদ হৃদয় ১০ বলে মাত্র ৫ রান করে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্যাচ আউট হন। এর প্রেক্ষিতে, ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও আলোচিত অগ্নিসংযোগের ভিডিওর সাথে তাওহিদ হৃদয়ের কোনো যোগসূত্র নেই। প্রকৃতপক্ষে, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পুরোনো ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

তাওহিদ হৃদয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড়। তার পারফরমেন্সের জন্যে যদি তার বাড়িতে উত্তেজিত জনতা অগ্নিসংযোগ করে থাকে তাহলে সেটি গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার হওয়ার কথা। তবে দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে উত্তেজিত জনতার অগ্নিসংযোগ করার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিতে ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Channel 24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীতে সাবেক এমপির দুটি বাড়িতে আগুন শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির শুরুর অংশের সাথে উক্ত ভিডিওর শুরুর ফুটেজের হুবহু মিল রয়েছে। ভিডিওটির শিরোনামে থেকে জানা যায়, এটি নোয়াখালীর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিও। 

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তর এবং অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে এ ঘটনায় প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। 

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তার পেটুয়াবাহিনী স্থানীয় জনতার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ তুলে এই ঘটনা ঘটানো হয় বলেও প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়। এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটির অগ্নিসংযোগের দৃশ্যটি প্রতিবেদনগুলোর ফিচার ইমেজ হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

সুতরাং, নোয়াখালীর হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পুরোনো ভিডিওকে ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয়ের বাড়িতে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগুন দেওয়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img