ইউনেস্কোর জরিপে বাংলা পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ও শ্রুতিমধুর ভাষা নির্বাচিত হয়নি

“জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক অধিসংস্থা ইউনেস্কো পরিচালিত ২০১০ সালের এক সমীক্ষায় বাংলা ভাষা বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ও শ্রুতিমধুর ভাষা নির্বাচিত হয়েছে” শীর্ষক একটি তথ্য ২০১০ সাল থেকে ইন্টারনেট ও লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে।

মিষ্টি ও শ্রুতিমধুর ভাষা
Screenshot from Crowdtangle

উক্ত দাবিতে ২০১০ সাল থেকে শুরু করে এখন অবধি প্রতিবছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।

২০১০ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে

২০১১ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে

২০১২ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে। ২০১৩ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে

২০১৪ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে

২০১৫ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে

২০১৬ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

২০১৭ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

২০১৮ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

২০১৯ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

২০২০ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

২০২১ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

২০২২ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

২০২৩ সালে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে

Screenshot Source: Changetv.press YouTube Channel

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে। ভিডিওগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে

Screenshot Source: Risingbd

উক্ত দাবিতে দেশীয় গণমাধ্যম প্রতিদিনের বাংলাদেশ, সময় টিভি, দৈনিক শিক্ষা, চেঞ্জ টিভি, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, রাইজিং বিডি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, একুশে টিভি, জনকন্ঠ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক ইনকিলাব এবং সংগ্রাম সংবাদ প্রচার করেছে।

Screenshot Source: BBC

উক্ত দাবি উল্লেখ করে বিবিসি বাংলা, বিডি জার্নাল, ডেইলি ক্যাম্পাস এবং পূর্বপশ্চিমের মতামত বিভাগে কলাম প্রকাশিত হয়েছে।

Screenshot of a Facebook post by Zee Bangla

ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল Zee Bangla এর ফেসবুক পেজে উক্ত দাবিতে একটি পোস্ট প্রচার করেছে। পোস্টটির আর্কাইভ দেখুন এখানে

Screenshots of false claims made by celebrities on Facebook related to this topic.

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক (আর্কাইভ) , ক্রিকেটার মুশফিকুর রহমান (আর্কাইভ) , সংগীত শিল্পী পারসা মেহজাবিন পূর্ণি (আর্কাইভ) এবং সংগীত শিল্পী শাপলা সালিক (আর্কাইভ) নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইলে উক্ত দাবিতে পোস্ট প্রচার করেছেন।

Screenshot of a Facebook post by কে এম খালিদ এম পি
Video Source: rokomari.com

এছাড়া সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ (আর্কাইভ) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার (আর্কাইভ) এই বিষয় উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন।

সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন গুগলে বাংলায় ‘বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা’ এবং ইংরেজিতে ‘sweetest language in the world’ সার্চ করলে ফলাফল আসে ‘বাংলা।’

Screenshot from Google
Screenshot from Google

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউনেস্কোর জরিপে বাংলা বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ও শ্রুতিমধুর ভাষা নির্বাচিত হওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত এমন কোনো প্রতিবেদন, জরিপ বা তালিকা-ই নেই।

ইন্টারনেটে যেভাবে গুজবটির সূত্রপাত হয়

অনুসন্ধানের মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে “UNESCO study also stated that the top three sweetest sounding language are Bengali, Spanish and Dutch” শীর্ষক ক্যাপশনে ‘anamus’ নামের একটি প্রোফাইল থেকে ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৫টা ০৬ মিনিটে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সর্বপ্রথম পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot of a Tweet by @_anamus

তার প্রায় ২ ঘন্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “yesterday UNESCO declared that Bengali is the sweetest languages of the world” শীর্ষক ক্যাপশনে ‘Kaberi Chatterjee’ নামের একটি প্রোফাইল থেকে ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা ১৪ মিনিটে আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত সর্বপ্রথম পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot of a Facebook post by Kaberi Chatterjee

পরবর্তীতে উক্ত দাবিটি ফেসবুক ও টুইটারে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। 

Screenshot Source: Facebook
Screenshot Source: Twitter

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল “Sweetest language tag for Bengali?” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার এবং ফেসবুকে প্রচারিত একটি বার্তা যদি বিশ্বাস করা হয় তবে বাংলা বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে। ইউনেস্কো দ্বারা পরিচালিত এই নির্বাচনে স্প্যানিশ এবং ডাচ যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মিষ্টি ভাষা হিসাবে স্থান পেয়েছে। টুইটার এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীরা উদযাপন শুরু করলেও কয়েক মাস আগে এই বিষয়ে অনলাইন ভোটিং পরিচালনাকারী ইউনেস্কোর কাছ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি।”

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, “টুইটার বার্তা অনুসারে, মে মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।”

Screenshot Source: Times of India

অর্থাৎ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টের ভিত্তিতে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ উক্ত সংবাদটি প্রচার করেছে। ইউনেস্কো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। কিন্তু টুইটারে প্রচারিত দাবির ভিত্তিতে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।”

তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে, ২০১০ সালের ০৭ মে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে ইউনেস্কো কর্তৃক এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

ইউনেস্কো কি এই বিষয়ে কোনো জরিপ করেছিলো?

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ‘বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা’ শীর্ষক কোনো জরিপ করেছে না-কি তা জানার জন্য ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলোতে (ফেসবুক এবং টুইটার) অনুসন্ধান করা হয়। তবে এধরণের জরিপের কোনো তথ্য উক্ত মাধ্যমগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এমন জরিপের অস্তিত্ব সম্পর্কে কী বলছে ইউনেস্কো?

‘বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা’ শীর্ষক জরিপের অস্তিত্ব জানতে ইউনেস্কোর প্রেস অফিসার থমাস মালার্ডের সাথে যোগাযোগ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

‘ইউনেস্কোর জরিপে বাংলা ভাষা বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা নির্বাচিত হয়েছে’ শীর্ষক দাবিটির সত্যতা কতটুকু এবং ইউনেস্কো এমন জরিপ করেছে না-কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন,

“এই দাবি সঠিক নয়। ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত এমন কোনো প্রতিবেদন, জরিপ বা তালিকা নেই। আমরা (ইউনেস্কো) কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই প্রতিটি ভাষার জন্য বৈচিত্রতা এবং সুরক্ষা প্রচার করি।”

গুগলে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় ‘বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা’ সার্চ করলে ফলাফল ‘বাংলা’ পাওয়ার কারণ কী?

সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন গুগলে বাংলায় ‘বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা’ এবং ইংরেজিতে ‘sweetest language in the world’ সার্চ করলে ফলাফল আসে ‘বাংলা’।

সাধারণত গুগলে কোনোকিছু সার্চ করলে গুগল ওপেন সোর্সে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে সার্চকারীকে ফলাফল দেখায়। এক্ষেত্রে আলোচিত বিষয়টি বাংলায় সার্চ করলে গুগল সময় টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত ফলাফল দেখাচ্ছে এবং ইংরেজিতে সার্চ করলে ‘ischoolconnect’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত ফলাফল দেখাচ্ছে।

Screenshot Source: Google
Screenshot Source: Google

যে দুইটি প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে গুগল সার্চে এমন তথ্য প্রদর্শিত হচ্ছে সে প্রতিবেদনগুলোতেও ইউনেস্কোর বানোয়াট জরিপটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে গুগল সার্চে এমন তথ্য প্রদর্শিত হচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হননি

মূলত, ২০১০ সালে ‘ইউনেস্কোর জরিপে বাংলা সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা নির্বাচিত হয়েছে’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব পোস্টের ভিত্তিতে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ সেসময় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর পরবর্তী সময় থেকে এখন অবধি এই দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম এবং লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে, ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট এবং প্রতিষ্ঠানটির সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলগুলোতে এমন কোনো জরিপের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ইউনেস্কোর একজন মুখপাত্র রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে, “ইউনেস্কো কর্তৃক প্রকাশিত এমন কোনো প্রতিবেদন, জরিপ বা তালিকা নেই।”

সুতরাং, ইউনেস্কোর জরিপে বাংলা পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ও শ্রুতিমধুর ভাষা নির্বাচিত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img