সম্প্রতি “ক্রিকেট আসলেই সুন্দর… শ্রীলঙ্কার জনগণকে চার মাসের খরচ দেবেন স্মিথ-স্টার্করা!” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্মিথ-স্টার্কদের শ্রীলঙ্কার জনগণকে চার মাসের সম্পূর্ণ খরচ দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার স্মিথ-স্টার্করা শ্রীলঙ্কার জন্য জাতিসংঘের ৪৭.২ মিলিয়ন ডলারের একটি জরুরি সহায়তা ফান্ডের আবেদনে সাড়া দিতে আহবান জানিয়ে অনুরোধ করেছেন।
কী-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এপি এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৬ জুন “Australia’s tour to give Sri Lanka Cricket a financial boost” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের এই সফর তাদের অর্থনীতিতে সুবাতাস আনতে পারে৷
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড পাঁচটি ওয়ানডে, তিনটি টি-টোয়েন্টি ও দুইটি টেস্টের সমন্বয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার এই পূর্ণাঙ্গ সিরিজের টিকেট বিক্রয়ের পুরো আয় শ্রীলঙ্কার জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।
নিউজ ডট এপিবি লাইভও ১০ জুন Australia’s Steve Smith, Mitchell Starc Back UN’s Appeal To Help Crisis-Hit Sri Lanka শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার স্মিথ-স্টার্করা শ্রীলঙ্কার জন্য জাতিসংঘের ৪৭.২ মিলিয়ন ডলারের একটি জরুরি সহায়তা ফান্ডের আবেদনে সাড়া দিতে আহবান জানিয়েছেন।
তাছাড়া, শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ০৯ জুন মিচেল স্টার্ক ও স্টিভেন স্মিথের ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে।
একই ভিডিও একই দিনে শ্রীলঙ্কা ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা নিউজওয়্যার তাদের টুইটার একাউন্টে প্রকাশ করেছে৷
ভিডিও বার্তায় তারা জানিয়েছেন, ‘শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে সচেতনার জন্য আমরা পাশে দাঁড়াচ্ছি। ২০০৫ সালেও সুনামির পর আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম এবং এটাই আমরা করতে পারি। আমরা একে অপরকে ১৭ বছরে ধরে সহায়তা করছি। আমরা অস্ট্রেলিয়ানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পেরে গর্বিত। শ্রীলঙ্কাকে এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমরা এক সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই।’
Also Read: উদ্বোধনের সময় সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনাটি মেক্সিকোর, বাংলাদেশের নয়
মূলত, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এই প্রথম শ্রীলঙ্কার জনগণ এখন ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি ও উচ্চমূ্ল্য, লোডশেডিং ইত্যাদির মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে লঙ্কান দ্বীপে অবস্থান করা স্টিভ স্মিথ-মিচেল স্টার্করা লংকানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শ্রীলঙ্কার মানুষকে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাস জরুরী মানবিক সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ এবং শ্রীলঙ্কার এনজিওগুলো একটি যৌথ প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার জন্য ৪৭.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হিউম্যানিটিরিয়ান নিডস অ্যান্ড প্রায়োরিটিস (এইচএনপি) নামে একটি প্রকল্পের আওতায় শ্রীলঙ্কার মানুষের ৪৭.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি জরুরি সহায়তা ফান্ড গঠনে আহবান জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন স্টিভ স্মিথ ও মিসেল স্টার্ক। স্টার্ক-স্মিথের এই অর্থ সহায়তার আহ্বানের ঘটনাকেই তারা দুইজন শ্রীলঙ্কার জনগণকে চার মাসের খরচ দেবেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, শ্রীলঙ্কার মানুষকে ৪ মাসের জন্য মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘের একটি প্রকল্পের অর্থ জোগাড়ের প্রচারণায় স্টার্ক-স্মিথের আহবানের ঘটনাকে তারা দুইজন শ্রীলঙ্কার জনগণকে চার মাসের খরচ দেবেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Australian High Commission, Sri Lanka and Maldives: Sri Lanka is currently going through a severe economic crisis
- ক্রিকেট ফ্যাঞ্চি: আর্থিক সঙ্কটে থাকা শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়াচ্ছেন স্মিথ-স্টার্করা