সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন চাইলো। সংলাপ ডেকে ফেঁসে গেল সিইসি– শীর্ষক ক্যাপশনে এবং সেনাবাহিনীর হতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগও চায়নি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ৮ মিনিট ৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে দুইটি ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক আলোচিত ভিডিওটির উদ্দেশ্যে দুটি ভিডিও দেখানো হয়৷
ভিডিও যাচাই-১
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা ভিডিওতে বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলা’র লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে এটিএন বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ৪ নভেম্বর “ফেরেশতা ছাড়া কোনো পোলিং এজেন্ট টিকবেনা’! ইসির বৈঠকে শেষে আর যা বললেন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, নিবন্ধিত দলগুলোর সাথে ইসির বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের প্রেস ব্রিফিংয়ের ভিডিও এটি।

এছাড়া, আলোচিত ভিডিওটিতে হুবহু এই ভিডিওর সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও যাচাই-২
আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটিতেও বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলা’র লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে এটিএন বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ নভেম্বর “বিএনপির মাজা ভাঙ্গা নিয়ে কি বললেন ভিপি নূর” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও এবং গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৩ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল-পূর্ব অনুষ্ঠানে গণ অধিকার পরিষদ নেতা নুরুল হক নুর এ কথা বলেন।

এছাড়া, ভিডিওতে থাকা তথ্যের সাথে আলোচিত ভিডিওটির দাবির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া বিষয়ক কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি “সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলো সিইসি” শীর্ষক থাম্বনেইল এবং শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। অধিকতর ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়। এছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রেও এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই দাবিতে ভিন্ন ভিডিও প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া সংক্রান্ত দাবিগুলো মিথ্যা।