সম্প্রতি ‘সেনাপ্রধানের নির্দেশে মাঠে সেনাবাহিনী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়।
ভিডিওটির বিস্তারিত অংশের শুরুতে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ এর একটি বক্তব্য যুক্ত করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার বা সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব কিংবা সেনাপ্রধান কোনো মন্তব্য করেননি বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একটি ভিডিও তৈরি করে কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই উক্ত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
গত ১১ এপ্রিল Sabai Sikhi নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ মিনিট ০৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তৈরি একটি নিউজ ভিডিও। সেখানে সাবেক ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ, এবং নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পুরনো কিছু ছবি দেখা যায়।
১ মিনিট ০৮ সেকেন্ডের এই নিউজ ভিডিওটি’র শুরুতেই সাবেক ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের একটি পুরোনো ক্লিপ যুক্ত করা হয়। এরপর ভিডিও’র পরবর্তী অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন নির্বাচন কমিশনার। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল বজায় রাখার জন্য মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে উপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে পারে। এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ায় খুশি অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যাতে তারা সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনে সকল সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে। এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বহাল রাখায় বিপাকে পড়লো আওয়ামী লীগ সরকার।’
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি ওয়ার্ড সার্চ করেও উক্ত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি আলাদা ছবি এবং ভিডিও যুক্ত করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ভিডিওটি’র কি ফ্রেম কেটে কয়েকটি স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ভিডিও’র শুরুর ১৩ সেকেন্ড অর্থাৎ সাবেক ইসি সচিবের বক্তব্যের অংশ ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ‘ভোটের ২-১০ দিন আগে সেনা ও বিজিবি মোতায়েন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন(আর্কাইভ) থেকে নেওয়া হয়েছে। যেখানে তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে সেনা মোতায়েন নিয়ে কথা বলেছিলেন।
এছাড়াও ভিডিওটির ক্যাপশন, থাম্বনেইল এবং বিস্তারিত অংশে কয়েকটি অসঙ্গতি খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
অসঙ্গতি-১
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন জানালেন সেনাপ্রধান’ শীর্ষক ক্যাপশন ব্যবহার করা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে এবিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া সেনাপ্রধান এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
অসঙ্গতি-২
‘সেনাপ্রধানের নির্দেশে মাঠে সেনাবাহিনী’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করা হলেও বিস্তারিত প্রতিবেদনে এবিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এবং সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধান সেনাবাহিনীকে মাঠে নামার নির্দেশও দেননি।
অসঙ্গতি-৩
ভিডিওতে বলা হয়,জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার। তবে ভিডিও’র শুরুতে যার বক্তব্য প্রদর্শন করা হয়েছে তিনি নির্বাচন কমিশনার নয়। উনি সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও বর্তমান নির্বাচন কমিশনার কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকেউ এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।
অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি এবং ভিডিও সংযুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো মাধ্যমে উক্ত দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্য দাবিতে সেনাপ্রধানের নাম জড়িয়ে সাবেক ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদের দেওয়া একটি বক্তব্যের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত দাবিতে প্রচারিত বক্তব্যটি তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েনের বিষয় নিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া প্রচারিত ভিডিওটি কয়েকটি পুরোনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়া নিয়ে সেনাপ্রধান বা বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের কেউ কিংবা সাবেক ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ কোনো মন্তব্য করেননি।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে পূর্বেও একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হবে দাবি করে সেনাপ্রধান বা নির্বাচন কমিশনার মন্তব্য করেছেন দাবিতে সাবেক ইসি সচিবের পুরনো বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jamuna TV on YouTube: ভোটের ২-১০ দিন আগে সেনা ও বিজিবি মোতায়েন
- Election Commission Official Website: http://www.ecs.gov.bd/
- Rumor Scanner Own Analysis