হবিগঞ্জ- ৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এবং মাগুরা- ১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের পুরোনো দ্বন্দ্বের বিষয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজা ‘সাকিবের নামে মামলা করা উচিৎ’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে গত ১২ জানুয়ারি Sports Center নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাশরাফি বিন মর্তুজা সাকিব আল হাসানের নামে মামলা করা উচিৎ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সাকিব আল হাসান কর্তৃক ব্যারিস্টার সুমনকে হুমকি দেওয়ার দাবিটিও সঠিক নয়। বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি ঘটনার ছবি ও ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে তার সাথে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে ভিডিওটির শুরুতে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ‘সবাইকে আইনের আওয়াতায় আসা উচিত’ শীর্ষক মন্তব্য করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে ব্যারিস্টার সুমনকে ‘তারে কোনো সমালোচনা করলে সে মারতে আসে’ শীর্ষক কথা বলতে দেখা যায়। এরপর ভিডিওটির উপস্থাপক কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে দাবি করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ‘সাকিব অনেক বেড়ে গেছে ওর নামে মামলা করা উচিত’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। এছাড়া তিনি আরও দাবি করেন, এমপি হবার পর ব্যারিস্টার সুমনকে আবারও মারার হুমকি দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এই ঘটনা শোনার পর সংবাদ মাধ্যমে এসে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, “প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কোড অফ কন্ডাক্ট থাকা উচিত। হঠাৎ করে একজন খেলোয়াড় কোনো সাধারণ মানুষকে মারতে যাবে এর জন্যে সেই খেলোয়াড়কে কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিত এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যেন বাকি খেলোয়াড়রা এইসব কাজ না করতে পারে। “
ভিডিও যাচাই ১
আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে মাশরাফি বিন মর্তুজার বক্তব্যের ফুটেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে তার বক্তব্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Ekattor TV এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ শুধু ক্রিকেটাররাই কথা বলতে পারবেন না: মাশরাফি | Khelajog | Ekattor TV শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর ৫৮ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট সময় পর্যন্ত অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওতে থাকা মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্লিপের হুবহু মিল রয়েছে।

এছাড়াও ভিডিওটি থেকে জানা যায়, উক্ত ভিডিওটি মূলত একাত্তর টেলিভিশনের খেলাধুল বিষয়ক অনুষ্ঠান খেলাযোগ-এ মাশরাফির দেওয়া সাক্ষাৎকারের ঘটনায় ধারণকৃত। ভিডিওটিতে তাকে বিসিবি‘র কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা মন্তব্য করতে দেখা যায়। কোড অফ কন্ডাক্টের কারণে খেলোয়াড়রা বোর্ড নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে না পারলেও বোর্ডের কর্মকর্তারা খেলোয়াড়দের নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে যা তা মন্তব্য করেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ডের সবার কোড অফ কন্ডাক্ট থাকা উচিত। সবাইকে আইনের আওতায় আসা উচিত। প্লেয়াররা শুধু কথা বলতে পারবে না আর সবাই যা মন চায় তাই বলে যাবে এটা তো হতে পারে না।’
অর্থাৎ, মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে করা পুরোনো মন্তব্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়াও ভিডিওটিতে তাকে ‘মামলা করা উচিত’ শীর্ষক কোনো মন্তব্যও করতে শোনা যায় না।
ভিডিও যাচাই ২
পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো ব্যারিস্টার সুমনের ফুটেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে তার বক্তব্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের Kalbela News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ব্যারিস্টার সুমনকে মারতে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান | Barrister Sumon | Shakib Al Hasan | Kalbela শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওর ৪ সেকেন্ড থেকে ৫ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত আলোচিত ভিডিওর ব্যারিস্টার সুমনের ক্লিপের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।

ভিডিওটি থেকে আরও জানা যায়, মূলত পুলিশ সদস্য হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দুবাই প্রবাসী আরাভ খানের আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনের জন্যে সাকিব আল হাসানের সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে ব্যারিস্টার সুমনের মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়। তখন তিনি বলেন, ‘সাকিব আল হাসান কিন্তু কোনো সমালোচনা নিতে পারেন না। তারে কোনো সমালোচনা করলে মারতে আসে।… তার নিজেরই তো একটা বিবেক থাকা উচিত যে, কোন জায়গায় তিনি যাবেন আর কোন জায়গায় তিনি যাবেন না। উনি যদি তারপরও মনে করেন যে, এইরকম একজন হত্যাকারী বা হত্যাকাণ্ডের আসামী তার ওখানে যাবেন আর ওতে উনি লজ্জাবোধ না করেন তাহলে আমার আসলে কিছু বলার নাই।’
এছাড়াও পরবর্তীতে আলোচিত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও গণমাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সাকিব আল হাসান কর্তৃক ব্যারিস্টার সুমনকে হুমকি দেওয়া এবং উক্ত বিষয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজার আলোচিত মন্তব্যের দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত বছরের ১৬ মার্চ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন তার ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাকে দেখামাত্র মারতে আসেন। ঘটনাটি সেসময় ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ চলাকালে ঘটে বলে তিনি জানান। সেসময় উক্ত ঘটনা নিয়ে প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমই সংবাদ প্রকাশ করে। সম্প্রতি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে সাকিব আল হাসান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পুনরায় তাকে মারার হুমকি দেন এবং এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত বলে মাশরাফি বিন মর্তুজা মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, সাকিব আল হাসান এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে বা পরে কখনোই মাশরাফি বিন মুর্তজা সাকিবকে জড়িয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেননি। এবং এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সাকিব আল হাসান ব্যারিস্টার সুমনকে হুমকি দিয়েছেন এমন তথ্যও কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সাকিব আল হাসান কর্তৃক সায়েদুল হক সুমনকে হুমকি দেওয়া এবং এর প্রেক্ষিতে সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত বলে মাশরাফি বিন মুর্তজা মন্তব্য করেছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Ekattor TV Youtube Channel: শুধু ক্রিকেটাররাই কথা বলতে পারবেন না: মাশরাফি | Khelajog | Ekattor TV
- Kalbela News Youtube Channel: ব্যারিস্টার সুমনকে মারতে গিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান | Barrister Sumon | Shakib Al Hasan | Kalbela
- Rumor Scanner’s Own Analysis