চলমান আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ এ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে গত ১০ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশকে ১১৪ রানের টার্গেট দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ১০৯ রান করে ৪ রানে ম্যাচটি হেরে যায়। পুরো ম্যাচে তাওহীদ হৃদয়ের আউটসহ আম্পায়ারের বেশ কয়েকটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত ছিল। এরই প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা আম্পায়াররা ঐ ম্যাচে ভুল করায় ক্ষেপে গিয়ে আম্পায়ারকে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাশরাফি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচকে কেন্দ্র করে আম্পায়ারদের শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি এবং এই দাবিতে প্রচারিত মাশরাফির ভিডিওর ফুটেজটি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দাবীকৃত ভিডিওতে ব্যবহৃত মূল ভিডিওটি একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলে খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, উক্ত বক্তব্যটি মূলত ২০২১ সালে একাত্তর টেলিভিশনের খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠান খেলাযোগ-এ মাশরাফির দেওয়া সাক্ষাৎকারের।
ভিডিওটিতে তাকে বিসিবি‘র কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা মন্তব্য করতে দেখা যায়। কোড অফ কন্ডাক্টের কারণে খেলোয়াড়রা বোর্ড নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে না পারলেও বোর্ডের কর্মকর্তারা খেলোয়াড়দের নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে যা তা মন্তব্য করেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ডের সবার কোড অফ কন্ডাক্ট থাকা উচিত। সবাইকে আইনের আওতায় আসা উচিত। প্লেয়াররা শুধু কথা বলতে পারবে না আর সবাই যা মন চায় তাই বলে যাবে এটা তো হতে পারে না।’

এই ভিডিওটি পুরোনো হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এই ভিডিওতে মাশরাফির চলমান বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করার কথা নয়।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ম্যাচ নিয়ে মাশরাফির একটি ফেসবুক পোস্ট করার বিষয়ে জানা যায়। সেখানে তিনি লিখেন, “’বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, তবে আমরাও পুওর অ্যাপ্লিকেশন করেছি। আশা ছাড়ছি না, ইনশা আল্লাহ সেরা আটে যাব। দারুণ সুযোগ হাতছাড়া হলো, যার ফলে আরও দুইটা প্রেশারের ম্যাচ খেলতে হবে। তাই এই ম্যাচকে যত দ্রুত ব্রেইন থেকে ডিলিট করা যায়, ততোই ভালো হবে সামনের দুইটা ম্যাচের জন্য।”
অর্থাৎ, তিনি আম্পায়ারিং নিয়ে কথা বললেও আম্পায়ারদের শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
মূলত, সম্প্রতি চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে গেলে মাশরাফি বিন মর্তুজা আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করে তাদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন এই দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাশরাফি বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে কথা বললেও আম্পায়ারদের শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। দাবীকৃত ভিডিওতে ব্যবহৃত ফুটেজটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার। এর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে মাশরাফি আম্পায়াদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Ekattor TV: শুধু ক্রিকেটাররাই কথা বলতে পারবেন না: মাশরাফি
- Dhaka Post: টাইগারদের হারে যাদের দায় দিলেন মাশরাফি
- Rumor Scanner’s Own Research