‘মমিন মসজিদ’ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি মসজিদ নয়, ভারতেও আছে কাঠ মসজিদ

বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠ মসজিদ বা কাঠের তৈরি মসজিদ বাংলাদেশে অবস্থিত শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার হতে লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম। দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের পিরোজপুরে অবস্থিত মমিন মসজিদ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি মসজিদ। 

উক্ত দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন কালবেলা (ফেসবুক),  এখন টিভি (ইউটিউব)।

বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন: সময় টিভি (ইউটিউব), এনটিভি, এটিএন নিউজ (ইউটিউব), যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, জাগোনিউজ২৪, সময়ের আলো, বার্তা২৪ (ইউটিউব), ডেইলি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জার্নাল, আমার পিরোজপুর

কাঠ মসজিদ

উক্ত দাবিতে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের পিরোজপুরে অবস্থিত মমিন মসজিদ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি মসজিদ নয়, বরং বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য আরেকটি দেশ ভারতের কর্ণাটকেও কাঠের তৈরি মসজিদ রয়েছে।

অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারত ও পাকিস্তানে কাঠ প্রাধান্য পাওয়া কয়েকটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়। 

তন্মধ্যে একটি মসজিদ হচ্ছে ভারতের কর্ণাটকে অবস্থিত মসজিদ জিনাথ বকশ। মসজিদটি সম্পর্কে কর্ণাটকের ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মসজিদটি ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে আরব মুসলিম ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। এই মসজিদটি তার খাঁটি ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর জন্য অন্যান্য সব মসজিদকে ছাড়িয়ে গেছে এবং এই মসজিদটি সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি। 

Screenshot : Department of Tourism, Karnataka

তাছাড়া, কর্ণাটকের নানা তথ্য প্রকাশকারী প্ল্যাটফর্ম কর্ণাটক ডট কম নামের ওয়েবসাইটেও এই মসজিদটি সম্পর্কে প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতেও এই মসজিদটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি বলে উল্লেখ করা হয়। 

অর্থাৎ, ভারতেও সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এমন একটি মসজিদ রয়েছে।

আমরা এ বিষয়ে ভারতের গণমাধ্যম দ্য কুইন্টের ফ্যাক্টচেক বিভাগের সম্পাদক অভিষেক মল্লিকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। অভিষেক রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, কর্ণাটকের এই মসজিদটি ছাড়াও দেশটির কেরালা এবং কাশ্মিরে একাধিক কাঠের তৈরি মসজিদ রয়েছে।

ভারতের কেরালা ট্যুরিজমের ওয়েবসাইট থেকে কুট্টিচিরায় অবস্থিত মিশকাল মসজিদের তথ্য জানা যায়৷ চার তলা বিশিষ্ট ৬৫০ বছরেরও অধিক সময়ের ইতিহাস ধারণ করা এই মসজিদটি কাঠের তৈরি এবং প্রাথমিকভাবে পাঁচ তলা ছিল। তবে, ওয়েবসাইটটির তথ্যানুসারে, এই মসজিদটির প্রবেশদ্বারে ইতালিয়ান টাইলস ব্যবহৃত হয়েছে। 

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ ডিজাইনের ওয়েবসাইটে মিশকাল মসজিদ সম্পর্কে একটি কেস স্টাডি পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনে এই মসজিদটিতে কাঠের ব্যবহারের বিষয়েও উল্লেখ পাওয়া যায়৷ একইসাথে, মসজিদটির মেঝেতে ল্যাটেরাইট ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

ভারতের শাহ – এ – হামদান বা খানকাহি মোল্লা নামে আরেকটি মসজিদেও কাঠের প্রাধান্য বা উপস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়। এই মসজিদকে ভারতের ট্যুরিজম মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট Incredible India এর নিবন্ধে কাঠের স্থাপত্য বলা হলেও জম্মু ও কাশ্মীর ভিত্তিক কিছু ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটিতে কাঠের পাশাপাশি ইট-পাথরেরও ব্যবহার করা হয়েছে।

পাকিস্তানের কুমরাতে জামেয়া মসজিদ থাল নামে আরেকটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়। পাকিস্তান ভিত্তিক কিছু কিছু ব্লগে এটিকে পুরোপুরি কাঠের তৈরি মসজিদ দাবি করা হয়েছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের একটি প্রতিবেদনেও এটিকে কাঠের তৈরি মসজিদ বলে দাবি করা হয়। তবে, একই প্রতিবেদনে সেখানকার অধিবাসীদের বরাতে বলা হয়, উক্ত মসজিদ তৈরিতে কাঠের পাশাপাশি পাথরও ব্যবহার করা হয়েছিল।

মূলত, বাংলাদেশের পিরোজপুরে অবস্থিত মমিন মসজিদকে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠ মসজিদ বা কাঠের তৈরি মসজিদ দাবিতে বিগত কয়েক বছর ধরে নানা তথ্য ও প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে৷ কিন্তু, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য আরেকটি দেশ ভারতের কর্ণাটকে পুরোপুরি কাঠের তৈরি আরেকটি মসজিদ রয়েছে। এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়ায় কাঠের প্রাধান্য পাওয়া বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে।

সুতরাং, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠ মসজিদ বাংলাদেশের পিরোজপুরে অবস্থিত মমিন মসজিদ শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img