শিশুর কামড়ে মৃত সাপটি বিষধর গোখরা নয়, এটি নির্বিষ একটি সাপ

সম্প্রতি ‘শিশুর কামড়ে বিষধর গোখরা সাপের মৃত্যু!‘ শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। 

Screenshot Jugantor website
Screenshot Bdjournal website

উক্ত বিষয়টি নিয়ে দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম যুগান্তর, বাংলাদেশ জার্নাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন, একুশে টিভি, দৈনিক আমাদের সময়, ভোরের কাগজ, ঢাকা টাইমস, বিডি মর্নিং, পূর্ব-পশ্চিম, বাংলাদেশ টুডে, ভোরের পাতা, বি বার্তা, এবং প্রতিদিনের সংবাদ সহ অসংখ্য ভূইঁফোড় অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রচারিত হয়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিশুর কামড়ে বিষধর গোখরা সাপের মৃত্যুর দাবিটি সঠিক নয় বরং শিশুটির কামড়ে মৃত সাপটি ছিল নির্বিষ ঘরগিন্নি সাপ।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে, দেশে সাপ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও কুসংস্কার দূরীকরণে কাজ করা ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন এর ফেসবুক পেজে গত ৭ জুন ‘সাপ সম্পর্কে কতিপয় গণমাধ্যমের অসত্য তথ্য প্রচারের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। 

ফাউন্ডেশনটির সভাপতি মো: মাহফুজুর রহমান স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, কতিপয় সংবাদকর্মী তথ্যের সত্যতা যাচাই না করেই নির্বিষ ঘরগিন্নি (common wolf) সাপটিকে বিষধর গোখরা বলে প্রচার করেছেন। সাপটি সম্পূর্ণ নির্বিষ, মানুষের জন্য একেবারেই বিপদজনক নয় এবং মানুষের চোয়ালের চাপে বা কামড়ে সাপটির মারা যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।

সাপটি সম্পর্কে আরও জানতে, a-z-animals নামের প্রাণী বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, ঘরগিন্নি সাপটির ইংরেজি নাম Common wolf snake, বৈজ্ঞানিক নাম Lycodon capucinus. দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাপটি দেখা যায়। এটি সাধারণত নিম্ন জলাশয় ও মানুষের বসতবাড়ির আশেপাশে থাকে। এই সাপটি বিষ উৎপাদন করলেও তা এতই দুর্বল যে, সাপটির বিষাক্ততা সম্পর্কে সরীসৃপবিদরা এটিকে নির্বিষ সাপ হিসেবে অবহিত করেছেন। 

গোখরা
Screenshot a-z-animals

এছাড়া শিশুর কামড়ে সাপের মৃত্যুর বিষয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন ৭ জুন ‘শিশুর কামড়ে সাপের মৃত্যু কতটা বিশ্বাসযোগ্য’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার করে। 

সংবাদটিতে তারা চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম মোস্তফাকে উদ্ধৃত করে জানায়, সাপের শরীরে কোনও বিষ থাকে না। সাপ যদি বাচ্চাকে না কামড়ায় তাহলে কোনও সমস্যা নেই। আর সাপের মাংস তো বাইরের দেশে অনেকে খায়। সুতরাং এই ঘটনা স্বাভাবিক।

মূলত ৭ জুন, মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক বছরের শিশুর কামড়ে বিষধর গোখরা সাপের বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে বলে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম সহ অনলাইন পোর্টালগুলোতে সংবাদ প্রচার করা হয়। 

সংবাদগুলোতে শিশুটির মাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, শিশুটি সকালে চাচাতো ভাই কাউসারের সঙ্গে ঘরে খেলছিল। খেলতে খেলতে দুজনই খাটের নিচে চলে যায়। পরে একটি মৃত সাপের বাচ্চা হাতে নিয়ে খাটের নিচ থেকে জান্নাতুলকে বের হয়ে আসতে দেখেন তিনি। এ সময় সাপটির শরীরে দুই জায়গায় কামড়ের চিহ্ন দেখতে পান তিনি। পরে শিশু ও মৃত সাপটিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আসেন তিনি। 

Also Read: হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের কারণে এসিড বৃষ্টির সতর্কবার্তার বিষয়টি গুজব

প্রসঙ্গত, শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ঘটনার ৪ ঘণ্টা পর তার শরীরে কোনো বিষক্রিয়ার লক্ষণ না পাওয়ায় তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।

সুতরাং, ‘শিশুর কামড়ে বিষধর গোখরা সাপের মৃত্যু’ শীর্ষক দাবিতে দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img