“সিঙ্গাপুরে মশার উপদ্রব কমানোর জন্য গবেষণাগারে লক্ষ লক্ষ কৃত্রিম মশা তৈরি করা হচ্ছে। এগুলির কাজ হলো স্ত্রী মশাদের খুঁজে বের করা এবং তাদের সাথে মিলিত হয়ে বাচ্চা দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেওয়া। এই পদ্ধতিটি ৯০% কার্যকর হয়েছে বলে প্রমাণিত” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বিগত বছর গুলো থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
বিগত বছর গুলোতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ‘সিঙ্গাপুরে মশার উপদ্রব কমাতে লক্ষ লক্ষ কৃত্রিম মশা উৎপাদন করা হচ্ছে’ এমন কোনো গবেষণার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি তবে ২০১৭ সালের অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের ব্র্যাডেল হাইটস এলাকায় প্রাথমিকভাবে ৩০০০ পোকা অবমুক্ত করা হয়েছিলো, যা ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সহায়তা করেছিলো।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহারে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারিতে “The mosquitoes that are fighting dengue and Zika” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের ব্র্যাডেল হাইটস নামক একটি পাহাড়ি এলাকায় একদল বিজ্ঞানী বাতাসে ৩০০০ পোকা অবমুক্ত করেন। বিজ্ঞানীদের দাবি অনুযায়ী পোকাগুলো ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাস ছড়ায় এমন মশার প্রজাতিকে ধ্বংস করার জন্য নতুন পদ্ধতিতে ট্রায়ালস্বরুপ বাতাসে ছাড়া হয়েছে।
এছাড়া, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘WION’ এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ২৯ আগষ্টে “Singapore is battling record dengue outbreak with lab-bred mosquitoes” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনটিতে, সিঙ্গাপুরে ল্যাবে পালিত পুরুষ মশার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় এমন মশার উপদ্রব রোধ সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
Wolbachia প্রকল্প প্রধান কর্মকর্তা ‘এনজি লি চিং’ জানান, “বিশেষভাবে প্রজনন করা এই মশাগুলো এমন এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া বহন করে যা স্ত্রী মশা গুলোর ডিম ফুটতে এবং প্রজনন বিস্তারে বাঁধা দেয়। ফলে মশার সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং যেসকল এলাকায় মশায় উপদ্রব বেশি সেসকল এলাকায় উক্ত পদ্ধতিতে ৯০% পর্যন্ত মশার পরিমাণ কমে গেছে।”
মূলত, সিঙ্গাপুরে বেশকিছু এলাকায় ডেঙ্গুর উপদ্রব বৃদ্ধি পেলে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা মশা হ্রাসের জন্য একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। বিশেষভাবে প্রজনন করা মশাগুলো এমন এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া বহন করে যা স্ত্রী মশা গুলোর ডিম ফুটতে এবং প্রজনন বিস্তারে বাঁধা দেয়। ফলে, মশার পরিমাণ অনেকাংশে হ্রাস পায়। সে সময়ে সিঙ্গাপুরে মশার উপদ্রব কমাতে উক্ত পদ্ধতি ব্যবহারের তথ্যটিকে সাম্প্রতিক সময়ে ‘সিঙ্গাপুরে মশার উপদ্রব কমাতে লক্ষ লক্ষ কৃত্রিম মশা উৎপাদন করা হচ্ছে’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত বিভিন্ন সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র জনাব সাঈদ খোকন।
সুতরাং, সিঙ্গাপুরে মশার উপদ্রব কমাতে কৃত্রিম পুরুষ মশার উৎপাদন এবং বাতাসে অবমুক্ত করার মাধ্যমে স্ত্রী মশাগুলোর ডিম ফুটানো এবং প্রজনন বিস্তারে বাঁধা দেওয়ার পুরোনো পদ্ধতিটি পূর্বের তারিখ উল্লেখ ব্যতীত সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।