সম্প্রতি “ব্রেকিং নিউজ, লজ্জা লাগে। শেখের বেটি হাসিনার ২ লাখ দিরহাম অর্থদণ্ড এবং ৫ বছর আরব বিশ্বে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি, শেষ পর্যন্ত আরববিশ্বে ও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল শেখের বেটি কে। আলহামদুলিল্লাহ্। শারজাহ আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ঘোষিত রায়” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শারজাহ আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ঘোষিত রায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২ লাখ দিরহাম অর্থদণ্ড ও ৫ বছর আরব বিশ্বে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি সত্য নয় বরং কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
গুজবের সূত্রপাত
আলোচিত দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ফেসবুকের নিজস্ব মনিটরিং টুলস এর সহায়তায় অনুসন্ধান করে দেখা যায়, তারেক রহমান ঐক্য পরিষদ BNP নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে চলতি মাসের ২ জুলাই, ৬ টা ৫১ মিনিটে Deluwar Kadir Suhel (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে “ব্রেকিং নিউজ, লজ্জা লাগে, শেখের বেটি হাসিনার ২ লাখ দিরহাম অর্থদণ্ড এবং ৫ বছর আরব বিশ্বে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি, শেষ পর্যন্ত আরববিশ্বে ও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল শেখের বেটি কে। আলহামদুলিল্লাহ্।” শীর্ষক শিরোনামে প্রথম একটি পোস্ট করা হয়।

পোস্টটিতে দাবি করা হয়, শারজাহ আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ঘোষিত রায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২ লাখ দিরহাম অর্থদণ্ড ও ৫ বছর আরব বিশ্বে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি তাকে আরববিশ্বে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
পরবর্তীতে পোস্টের কমেন্ট বক্সে পোস্টদাতা আরও কিছু অংশ সংযোজন করেন। সেখানে তিনি মামলার আরও বিস্তারিত তথ্য আসছে দাবি করে উল্লেখ করেন, “শেখ হাসিনাকে দুই লাখ দিরহাম অর্থদন্ড ও ৫ বছরের জন্য আরব বিশ্বে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, খন্দকার মাসরুর হোসেন মিতু ও তৌফিক নেওয়াজ সহ ১০ জন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুই লাখ দিরহাম অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। ১৪ নং থেকে ৫৩ নং আসামি বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। এই মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও শেখ রেহানাকে এবং মানি লন্ডারিং সহ অন্যান্য মামলা চলবে।”

পরবর্তীতে একইদিনে ১২.৪৫ মিনিটে দেশ মাতা খালেদা জিয়া (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেজে আগের পোস্ট ও কমেন্টবক্সের তথ্যসহ একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এর ১০ মিনিট পরে একই পোস্ট ১২.৫৫ মিনিটে লাকসাম যবুদল বিএনপি (আর্কাইভ) নামের একটি ফেসবুক পেইজে, বিকাল ৪.০১ মিনিটে Ziaur Rahman BNP. (আর্কাইভ) নামের আরেকটি ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়। এই পোস্টগুলোর কোনোটিতেই দাবিকৃত তথ্যের কোনো ধরণের তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া আরব আমিরাত সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনিস্ট্রি অব জাস্টিসের ওয়েবসাইটেও এ ধরনের কোনো রায়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এর আগেও চলতি বছরের মার্চে “অর্থ পাচারের মামলায় হাজিরা দিতে আরব আমিরাতে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।” শীর্ষক একটি তথ্য ইন্টারনেট ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সেসময় দাবি করা হয়, অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজিরা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমিরাত যাচ্ছেন। তার কন্যার সাবেক স্বামী খন্দকার মাসরুর হোসাইন মিতুর আরব আমিরাতে অর্থ পাচার মামলায় কন্যা পুতুল সহ শেখ হাসিনা নিজেও আসামী। সেসময় এটি নিয়ে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার।
এছাড়া কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে ‘Bd Politico’ নামের একটি ওয়েবসাইটে গত ২৫ জুন “আরব আমিরাতে মানি লন্ডারিং মামলার কয়েক আসামী গ্রেফতার” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিচারাধীন বহুল আলোচিত মানি লন্ডারিং মামলার একাধিক আসামীকে গ্রেফতার করেছে শারজাহ পুলিশ। ২৯ জুন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবেদনটির কোথাও কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া কোনো গণমাধ্যমেও এ ধরনের কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে অর্থদণ্ড ও ৫ বছর আরব বিশ্বে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির মতো ঘটনা ঘটলে আরব আমিরাত কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হওয়া উচিত। কিন্তু এমন কোনো তথ্য আরব আমিরাত কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২ লাখ দিরহাম অর্থদণ্ড ও ৫ বছর আরব বিশ্বে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি” শীর্ষক দাবির কোনো ভিত্তিই নেই এবং বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Abu Dhabi Judicial Department: https://www.adjd.gov.ae/sites/eServices/EN/Pages/CaseStudyEnquiry.aspx
Dubai Court: https://www.dc.gov.ae/PublicServices/InquiryByCaseNumber.aspx?lang=en
Ministry of Justice: https://www.moj.gov.ae/en/search.aspx?type=all&query=Case%205251#page=1