সম্প্রতি, “বিকাশের বিশাল উদ্যোগ: দেশের সবাইকে ৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা। দেশের সবাই পাচ্ছেন ৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা একদম ফ্রি” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। প্রচারিত উক্ত ফেসবুক পোস্টটির সাথে একটি লিঙ্ক সংযুক্ত করে লিঙ্কটিতে ক্লিক করতে বলা হয়েছে।

লিঙ্কের সংযুক্তি ছাড়া উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের সবাইকে ৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কোনো ঘোষণা বিকাশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি বরং, ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে এই প্রলোভন দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত পোস্টগুলোতে থাকা ওয়েবসাইট লিংকে প্রবেশ করলে উপরে বিকাশের লোগো এবং “বাংলাদেশের মানুষকে আর্থিক স্বস্তি দিতে বিকাশ এনেছে ৫০০ টাকার উপহার” শীর্ষক একটি লেখা পাওয়া যায়। এরপর বিস্তারিত অংশে বলা হয়, টাকা সবাই পাবে এবং ফর্ম পূরণ করার পর বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে।
আরেকটু নিচে স্ক্রল করলেই টাকা পাওয়ার জন্য একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়। ফর্মটিতে নিজের নাম, জেলা, এই মূহুর্তে (ফর্ম পূরণ করার মুহূর্তে) বিকাশ অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, বিকাশ সার্ভিস কেমন লাগে ইত্যাদি তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন অনুসন্ধানকারী নিরাপত্তাজনিত কারণে ভুল তথ্য দিয়ে উক্ত ফর্ম পূরণ করে জমা দিলে এটি আরেকটি নতুন পেজে নিয়ে যায়। উক্ত নতুন পেজটিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম। নতুন পেজের ইন্টারফেসটি হুবহু বিকাশে পেমেন্ট করার ইন্টারফেসের মতো। তাছাড়া, দাবি অনুসারে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারীর ৫০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও নতুন ইন্টারফেসটি হচ্ছে কাউকে টাকা পেমেন্ট করার ইন্টারফেস। অধিকন্তু, এখানে পেমেন্ট গেটওয়ের জায়গায় বিকাশ কর্তৃপক্ষের কোনো কিছুর বদলে “sagor enterprise” নামটি দেখা যায়৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পূর্ববর্তী ফর্মে নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে আছে হিসেবে উল্লেখ করা ২৪০০ টাকাই এখানে পেমেন্টের পরিমাণ। এরপর বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার চাওয়া হয়।
এ পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারী বিকাশহীন নিজের একটি নাম্বার দিলে “The input wallet is not eligible” লেখাটি প্রদর্শন করে, যা প্রমাণ করে এটি বিকাশের আসল পেমেন্ট পেজেই নিয়ে এসেছে৷ তাছাড়া এ বিষয়ে বিকাশের ডোমেইন নাম দেখেও নিশ্চিত হওয়া যায়৷

তারপর সঠিক বিকাশ নাম্বার দিলে ওটিপি চাওয়া হয়। সঠিক ওটিপি দিলে পরবর্তীতে পাসওয়ার্ড চাওয়া হয়৷ অর্থাৎ, বিকাশ নাম্বার, ওটিপি এবং পাসওয়ার্ড ঠিকভাবে বসালে অ্যাকাউন্টে থাকা তথা ফর্মে উল্লেখ করা টাকা প্রতারকের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। কিন্তু, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারী সঠিক পাসওয়ার্ড দিয়ে সর্বশেষ ধাপটি সম্পন্ন করেন নি।

উল্লেখ্য যে, কিছুক্ষণ পর ওটিপি দেওয়ার সময় অতিক্রান্ত হলে এটি রিডিরেক্ট করে আরেকটি পেজে নিয়ে যায় এবং সেখানে লেখা দেখতে পাওয়া যায়, “অভিনন্দন প্রিয় গ্রাহক! আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে। আপনার বিকাশ ব্যালেন্স থেকে কিছু টাকা জামানত হিসেবে কেটে নেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ কর্মদিবসের ভেতর জামানতের কেটে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়া হবে এবং আপনার Bonus এর টাকা আপনার বিকাশ নম্বরে পাঠানো হবে। সাবধান! এই ৭২ ঘন্টা সময়ের ভেতর বিকাশ অ্যাপ অথবা *২৪৭# ডায়াল করে বিকাশ ব্যবহার করবেন না। করলে আপনার বিকাশ একাউন্টটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিস্তারিত জানতে কল করুন: 01915564632”।
অর্থাৎ, টাকা কেটে নেওয়ার পর প্রতারক সেটাকে জামানত দাবি করেছে৷ উল্লেখ্য যে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫০০ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু সঠিক তথ্য, পাসওয়ার্ড এবং ওটিপি দিলে অ্যাকাউন্টে থাকা সব টাকা প্রতারকের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।

উক্ত মোবাইল নাম্বারটি ট্রুকলারে যাচাই করলে দেখা যায় এটি “বাবুল ভাই বিআই” নামে সেভ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই নাম্বারটি বিকাশ কর্তৃপক্ষ বা তাদের কাস্টমার কেয়ারের নাম্বার নয়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে, দেশের সবাইকে ৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কোনো ঘোষণা বিকাশ দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করতে প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড সার্চ করলে বিকাশের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, দেশের সবাইকে বিকাশের পক্ষ থেকে ৫০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- BKash – Website
- Bkash – Facebook Page
- Rumor Scanner’s analysis