শাহরিন নামের রোগাক্রান্ত শিশুর তথ্যে ভিন্ন নাম্বার যুক্ত করে আর্থিক প্রতারণা

সম্প্রতি, “শাহরিনকে বাঁচাতে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। শাহরিন সুবহা শ্রেষ্ঠা, বয়স -১০. শাহরিন আওয়ার লেডি অব ফাতিমা গার্লস স্কুল ( মিশনারী স্কুল , কুমিল্লা ) এর তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী। শাহরিনের মায়ের পথ ধরেই হেটে চলেছে শাহরিন এবং তার দুটো কিডনি ফেলিউর হয়ে গিয়েছে।” শীর্ষক শিরোনামে এক শিশুর কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করে একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

শাহরিন

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত আর্থিক সহায়তার আবেদনটি সত্য হলেও এতে উল্লিখিত বিকাশ ও নগদ নাম্বারটি শাহরিনের চিকিৎসার আর্থিক সাহায্য পাঠানো প্রকৃত নাম্বার নয় বরং শাহরিনের জন্য সহায়তা পাঠানোর মূল বিকাশ ও নগদ নাম্বারটি পরিবর্তন করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত ফেসবুক পোস্টে নতুন বিকাশ ও নগদ নাম্বার সংযুক্ত করা হয়েছে।

কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, দেশীয় সংবাদমাধ্যম “বাংলাদেশ টুডে” এর অনলাইন সংস্করণে গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে “শিশু শ্রেষ্ঠা বাঁচাতে চায়” শীর্ষক শিরোনামে ‘শাহরিন সুবহা শ্রেষ্ঠা’ নামের এক শিশুকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Bangladesh Today

এছাড়াও, চলতি বছরে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ফেসবুক একাউন্ট থেকে শাহরিন সুবহা শ্রেষ্ঠার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের দাবিতে প্রচারিত একাধিক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। সেসব পোস্টগুলোতে শাহরিন সুবহা শ্রেষ্ঠার বাবার “Shahria Ripon” নামের ফেসবুক একাউন্টকে ট্যাগ/মেনশন করা হয়। এমন (কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এখানে এবং এখানেআর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে )

পাশাপাশি, শাহরিনের বাবা (Shahria Ripon) গত ১১ এপ্রিল নিজে তার একাউন্ট থেকে শ্রেষ্ঠার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পোস্ট (আর্কাইভ এখানে) করেন।

মূলত, কুমিল্লার ইসলামপুরের মোঃ শাহরিয়ার হুদা রিপনের মেয়ে শাহরিন সুবহা শ্রেষ্ঠা। কুমিল্লার আওয়ার লেডি অব ফাতিমা গার্লস স্কুলের ছাত্রী শাহরিনের দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে শাহরিনকে নিয়মিত ডায়ালেসিস করানো হচ্ছে এবং তার সুস্থ হয়ে উঠার জন্য জরুরীভাবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সহযোগিতা চেয়ে একাধিক ফেসবুক একাউন্ট থেকে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হয়।

পরবর্তীতে, শাহরিনের বাবা শাহরিয়ার হুদা রিপন চলতি বছরে তার ফেসবুক একাউন্টে তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে নিজের বিকাশ (০১৭৩৪৩০০৩০০) এবং ব্যাংক একাউন্ট নাম্বারসহ (এবি ব্যাংক, মোগলটুলি শাখা, কুমিল্লা,হিসাব নং- ৪১৩১-৫৮২০১১-৩০০) পোস্ট করেন।

বিষয়টি অধিক নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে শাহরিন সুবহা শ্রেষ্ঠার বাবা শাহরিয়ার হুদা রিপনের সাথে যোগাযোগে করা হলে তিনি জানান, “বর্তমানে শাহরিন ঢাকার শ্যামলীতে রিং রোডে অবস্থিত ঢাকা সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালেসিস করছে এবং আসন্ন মে মাসের ১ তারিখ ভারতের ভেল্যারে সিএমসি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাবেন। তিনি আরও জানান পূর্বেও শাহরিনকে ভারতের ভেল্যারে সিএমসি তে চলতি বছরের ৪ মার্চে ভর্তি করা হয়েছিল এবং একই মাসের ৭ তারিখ হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র (নিচে ছাড়পত্রের সংযুক্ত) দেওয়া হয়।”

তবে, সাম্প্রতিক সময়ে শাহরিনের চিকিৎসার তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে কেবলমাত্র বিকাশ নাম্বার পরিবর্তন করে কিছু ফেসবুক আইডি ও গ্রুপ থেকে শাহরিনের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

এছাড়া, এসকল আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদনকৃত ফেসবুক পোস্টে উল্লিখিত বিকাশ ও নগদ (01888795366, 01925367058 ও 01925366960) নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিগত কিছুদিন যাবত শুধুমাত্র নাম ও ছবি পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে আর্থিক সহায়তার নামে প্রতারণা মূলক তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, রিউমর স্ক্যানার টিম পূর্বেও বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আর্থিক সাহায্য চেয়ে করা পোস্টগুলোকে শনাক্ত করে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সুতরাং, আর্থিক সহায়তার নামে প্রতারণার উদ্দেশ্যে শিশু শাহরিনের জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদনমূলক পোস্টের প্রকৃত বিকাশ ও নগদ নাম্বার পরিবর্তন করে নতুন বিকাশ ও নগদ নাম্বার সংযুক্ত করে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img