সম্প্রতি “মাদ্রাসা পড়ুয়া কোরআনে হাফেজ বিরল রোগে আক্রান্ত আশিককে নিয়ে তার পিতা হাফেজ নুরুল হক অসহায় অবস্থায় আছেন। হতদরিদ্র আশিকের বাবা এ পর্যন্ত দুই লাখ টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ বহন করেছেন।আশিকের চিকিৎসার জন্য এখনও প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন।” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকের পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে । আর্কইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে মাদ্রাসা পড়ুয়া বিরল রোগে আক্রান্ত কোরআনে হাফেজ আশিকের ছবি সম্বলিত আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদনকৃত পোস্টগুলোতে যে বিকাশ নাম্বারটি (01846823129) ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি একটি আর্থিক প্রতারক চক্রের নাম্বার।
Morin Ads’ নামের একটি ফেসবুক আইডি হতে ২০২১ সালের ৮ জুলাই “একজন মানুষ তার মেয়ে হিসেবে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ বহন করছে।হয়ত একার পক্ষে সম্ভব না,তবে চাইলে কিছুটা হলেও সম্ভব। আপনার এই সাহায্যে বেচে যেতে পারে একটি প্রাণ ” শীর্ষক শিরোনামে আরেকটি আর্থিক সাহায্যের জন্য একই বিকাশ-নাম্বার ব্যবহার করে একটি পোস্ট (আর্কাইভ এখানে) খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে একই ছবি এবং একই বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করে ফেসবুকে আর্থিক সহায়তার আবেদন প্রচারিত হয়ে আসছে।
পাশাপাশি, Morin ads নামে একই ফেসবুক আইডিতে ২০২২ সালের ১৯ জুলাই “তাহমিদের চিকিৎসা করতে অনেক অর্থের প্রইয়োজন ডাক্তার এর হিসেব মতে প্রায় ১৫/২০লক্ষ টাকার প্রয়োজন । সবাই এগিয়ে আসুন প্লিজ।” শীর্ষক শিরোনামে আরেকটি আর্থিক সাহায্যের জন্য একই বিকাশ-নাম্বার ব্যবহার করে একটি পোস্ট (আর্কাইভ এখানে) খুঁজে পাওয়া যায়। এটি একটি প্রতারণামূলক পোস্ট। রিউমর স্ক্যানার তাহমিদকে নিয়ে পূর্বে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
Morin ads নামের আইডিতে ২০২২ সালের ১০ জুলাই এবং ১৪ জুলাই যথাক্রমে “ফরিদপুরের নগরকান্দার ছেলে, (কোরআন হাফেজ মাহমুদ) মরণব্যাধী ক্যানসারে আক্রান্ত, কোরআনের পাখি হাফেজ মাহমুদ আবার কোরআন পড়তে চায়, এর পাশে দাঁড়ানো দেশবাসীর কর্তব্য।” এবং “সুচিকিৎসার অভাবে এভাবেই ক্রমশঃ অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে শিশুটি । আর নিজ সন্তানের এমন দুরবস্থায় অসহায় পিতার আকুতি, চোখের জল দেখলে চোখে পানি চলে আসবে যেকারো” শীর্ষক শিরোনামে আরো দুটি পোস্টে একই বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয় ( ফেসবুক পোস্ট গুলো এখানে,এখানে।আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে)।
এছাড়াও, উক্ত হাফেজ আশিকের আর্থিক সাহায্যের আবেদন দাবির পোস্টগুলোতে সংযুক্ত ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, উক্ত ছবিগুলোতে হাসপাতালের কাগজপত্র ২০২১ সালের যেখানে রোগীর নাম-ফাবিহা,বয়স-ছয়মাস,লিঙ্গ-মেয়ে।
মূলত, আর্থিক প্রতারণার উদ্দেশ্যে হাফেজ আশিক নামের এক রোগাক্রান্ত শিশুর ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাহায্য চাওয়া হয়। পোস্টে উল্লেখিত (01846823129) বিকাশ নাম্বারটি আরো একাধিক আর্থিক সাহায্য সংক্রান্ত পোস্টে ব্যবহার করা হয়েছে। নাম্বারটিতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ব্যবহারকারী ফোনটি রিসিভ করেন নি।
ছবিগুলোর প্রকৃত ঘটনা এবং প্রেক্ষাপট সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে না পাওয়া গেলেও এই বিষয়টি নিশ্চিত যে সাম্প্রতিক সময়ে কথিত হাফেজ আশিকের জন্য আর্থিক সহায়তার আবেদন দাবিতে ব্যবহৃত বিকাশ নাম্বারগুলো আর্থিক প্রতারণা চক্রের।
উল্লেখ্য, Sabbir alam নামের ফেসবুক আইডিতে ১৯ জুলাইয়ে হাফেজ আশিকের জন্য সাহায্যের আবেদন পোস্টে (01846823129) নাম্বারটি ছাড়াও আরো কয়েকটি ফোন নাম্বার পাওয়া যায়। প্রদত্ত বিকাশ ০১৭২৮১৮২০৫৭ (ব্যক্তিগত), নগদ ০১৭৯৫০৩৭০১৬ (ব্যক্তিগত) রকেট ০১৭০০৬১০০৮৮ নাম্বারগুলোতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নাম্বারগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, পূর্বেও বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আর্থিক সাহায্য চেয়ে করা পোস্টগুলোকে শনাক্ত করে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, আর্থিক প্রতারণা জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাফেজ আশিকের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য দাবিতে ছবি ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।