সম্প্রতি অনলাইনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে, যেখানে কথিত সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা কি চান আমি দেশে আসি? আমিই আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াই। এমনটা কি চান? এমনটা যদি চেয়ে থাকেন তাহলে আপনাদেরও আমার পাশে থাকতে হবে, মিলেমিশে কাজ করতে হবে। দেশের জন্য মন কাঁদছে আমার৷ খুব তাড়াতাড়ি দেশে আসবো আমি মনে করছি। ইনশাআল্লাহ আসবো।”

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিতে কিছু পোস্টের ক্যাপশনে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ‘দলীয় হাল ধরতে চাই’ বলেছেন বলেও দাবি করা হয়।
একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, তাড়াতাড়ি দেশে আসার বিষয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি একটি ভিডিওকে আসল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল হওয়ার সপক্ষে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে সায়মা ওয়াজেদের বক্তব্য, অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।
পরবর্তীতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চে অনলাইন প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম ‘লিংকডইন’ এ ‘হামিদুল ইসলাম’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ২ এপ্রিলে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে সায়মা ওয়াজেদের নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। পোস্টটিতে সায়মা ওয়াজেদের একটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সায়মা ওয়াজেদের পোশাক ও মুখভঙ্গির মিল দেখা যায়।

এ থেকে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত সায়মা ওয়াজেদের উক্ত ছবির প্রেক্ষিতে এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তবে সায়মা ওয়াজেদের ছবিটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘TALL’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ভিডিওটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৬ শতাংশ।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দেশে ফেরার বিষয়ে বক্তব্যে দাবিতে প্রচারিত এই ভিডিওটি সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Hamidul Islam – LinkedIn Post
- DeepFake-O-Meter
- Rumor Scanner’s analysis