সেনাবাহিনী কর্তৃক পুলিশকে মারা, গণঅভ্যুত্থান এবং সেনাবাহিনীর দেশ চালানোর গুজব

সম্প্রতি, মাঠে নেমেই পুলিশকে পেটাচ্ছে সেনাবাহিনী আজ থেকে দেশ চালাবে সেনাবাহিনী– শীর্ষক শিরোনামে এবং মাঠে নেমেই পুলিশকে পেটাচ্ছে সেনাবাহিনী, গণঅভ্যুত্থান আজ থেকে দেশ চালাবে সেনাবাহিনী– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী মাঠে নেমে পুলিশকে পেটাচ্ছে এবং আজ থেকে গণঅভ্যুত্থান। দেশ চালাবে সেনাবাহিনী। 

পুলিশকে মারা

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাবাহিনী হাতে পুলিশের মার খাওয়া, গণঅভ্যুত্থান এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক দেশ চালানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো সঠিক নয় বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও। ভিডিওটিতে একটি লাইভ টকশো, একটি সংবাদ প্রতিবেদন এবং বিএনপি’র রাজনৈতিক নেতা গোলাম মাওলা রনিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

ভিডিও যাচাই- ১

আলোচিত ভিডিওটিতে একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে kanaksarwarNEWS নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “আন ল’ফুল কমান্ড মানতে বাধ্য না সেনাবাহিনী-মেজর জেনারেল এহতেশাম-উল হক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টকশো খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ)

উক্ত টকশোটির একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

৫৩ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের টকশোটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৪৩ সেকেন্ড ৩০ মিনিটের পরে উপস্থাপককে ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর এক সদস্যকে রাজনৈতিক কর্মী কর্তৃক লাথি দেওয়ার একটি ছবি নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়।

অর্থাৎ, এখানে সেনাবাহিনীর হাতে পুলিশের মার খাওয়া বা গণঅভ্যুত্থান এবংকি সেনাবাহিনী কর্তৃক দেশ চালানো সংক্রান্ত কোনো কথা বা তথ্য উপস্থাপন করতে শোনা যায়নি।

ভিডিও যাচাই- ২ 

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রচার করা হয় এবং সেখানে জাতীয় গণমাধ্যম কালবেলা’র লোগো দেখা যায়। সেই লোগো’র সূত্র ধরে অনুসন্ধানে কালবেলা’র ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ ডিসেম্বর “ভোটের আগে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া। (আর্কাইভ

উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনটি হুবহু আলোচিত ভিডিওটিতে প্রচার করা হয়। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে থাকবে ১৩ দিন। আগামী ৭ জানুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ। এর আট দিন আগে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব বাহিনীর দায়িত্ব সম্পর্কেও বলা হয়েছে।

অর্থাৎ, এই প্রতিবেদনেও সেনাবাহিনীর হাতে পুলিশের মার খাওয়া বা গণঅভ্যুত্থান এবংকি সেনাবাহিনী কর্তৃক দেশ চালানো সংক্রান্ত কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে শোনা যায়নি। 

ভিডিও যাচাই- ৩

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে বিএনপি’র নেতা গোলাম মাওলা রনিকে বক্তব্য দিতে শোনা যায়। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গোলাম মাওলা রনির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “নির্বাচন বানচাল নিয়ে আমেরিকার গোপন দলিল ফাঁস! রাশিয়ার গোয়েন্দা রিপোর্টে আ.লীগে অস্থিরতা!” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্কাইভ

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে বিএনপি’র নেতা গোলাম মাওলা রনিকেও সেনাবাহিনীর হাতে পুলিশের মার খাওয়া বা গণঅভ্যুত্থান এবংকি সেনাবাহিনী কর্তৃক দেশ চালানো সংক্রান্ত কোনো কথা বা তথ্য উপস্থাপন করতে শোনা যায়নি।

পাশাপাশি, দাবিগুলো যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

একটি দেশে গণঅভ্যুত্থান বা সেনাবাহিনীর কাছে দেশ চালানোর সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই তা গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়ার কথা। কিন্তু উক্ত দাবিগুলো নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে “মাঠে নেমেই পুলিশকে পেটাচ্ছে সেনাবাহিনী আজ থেকে দেশ চালাবে সেনাবাহিনী”– শীর্ষক শিরোনামে এবং “মাঠে নেমেই পুলিশকে পেটাচ্ছে সেনাবাহিনী, গণঅভ্যুত্থান আজ থেকে দেশ চালাবে সেনাবাহিনী”– শীর্ষক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, সেনাবাহিনীর হাতে পুলিশের মার খাওয়া, গণঅভ্যুত্থান এবং দেশ চালাবে সেনাবাহিনী শীর্ষক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img