মাইজভান্ডার দরবার শরীফ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিটি মিথ্যা

গত ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকায় রাতে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারী সুন্নি আকিদা অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মিলাদুন্নবী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আয়োজিত জশনে জুলুসে যাওয়া ব্যক্তিদের বহনকারী বাস হাটহাজারি মাদ্রাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একজন তরুণ হাটহাজারী মসজিদ লক্ষ্য করে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে একটি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পরার পর হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের বাসে হামলা করে। যার পর সংঘর্ষের শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে ৭ সেপ্টেম্বর দুুপুর থেকেই একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত মাইজভান্ডার দরবার শরীফে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। হাটহাজারী মাদ্রাসায় হামলার প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনী এই অভিযান চালায় বলেও পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাটহাজারী মাদ্রাসায় হামলার প্রস্তুতিকালে মাইজভান্ডার দরবার শরীফে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, খিলগাঁও থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট উদ্ধার করে মসজিদে রেখে সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করেছিল সচেতন এলাকাবাসী। সেই ঘটনার ছবিকেই সম্প্রতি এই ভুয়া দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ‘আল-জামিয়াতুল আহ্’লিয়া উম্মাহাতুল মু’মিনীন মহিলা মাদ্রাসা’ নামক ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ০৭ আগস্টে প্রকাশিত একটি পোস্টে অন্যান্য ছবির পাশাপাশি আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Image Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, খিলগাঁও থানা থেকে লুট হওয়া বিভিন্ন অস্ত্র সেসময় উদ্ধার করে মসজিদে জড়ো করে সেনাবাহিনীর হাতে এলাকাবাসী হস্তান্তর করে।

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০৭ আগস্ট খিলগাঁও থানার লুট হওয়া শতাধিক অস্ত্র ফিরিয়ে দিলেন এলাকাবাসী শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও একই ছবিগুলো সংযুক্ত থাকতে দেখা যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশ থেকে জানা যায়, রাজধানীর খিলগাঁও থানা থেকে লুট হওয়া শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র খিলগাঁও ঈমানবাগ জামে মসজিদে উদ্ধার করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ০৭ আগস্ট (বুধবার) দুপুরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এসব আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত দেয়া হয়। 

অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত মাইজভান্ডার দরবার শরীফের নয়, বরং রাজধানীর খিলগাঁও ঈমানবাগ জামে মসজিদের। এর সাথে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ কিংবা হাটহাজারী মাদ্রাসার কোনো সম্পর্ক নেই।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ থেকে কখনো কোনো অস্ত্র উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, হাটহাজারী মাদ্রাসায় হামলার প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনীর মাইজভান্ডার দরবার শরীফ থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img