রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়ার তথ্যটি গুজব

সম্প্রতি, “ভারতের মুসলমানরা প্রতিনিয়ত সরকারিভাবে চুড়ান্ত জুলুম নির্যাতনের শিকার,, অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দিলেন। শরিয়ত মেনে চলার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন রাশিয়ার মুসলমানদের।” শীর্ষক শিরোনামে মুসলমান প্রতিনিধিদের সাথে পুতিনের ছবিসহ একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কর্তৃক ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয় এবং বরং উক্ত তথ্যটি কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই ভিত্তিহীনভাবে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে এবং উক্ত তথ্যের সাথে সংযুক্ত ছবিটি প্রায় দশ বছর আগে রাশিয়ার তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের ধর্মগুরুর সাথে পুতিনের সাক্ষাতের সময়কার।

গুজবের সূত্রপাত

অনুসন্ধান করে দেখা যায়, “আজিজ আল হাসান” নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত ৩১ মে দুপুর ১২.১৪ মিনিটে এই বিষয়ে প্রথম একটি পোস্ট প্রকাশ করা হয়েছিলো।

যেখানে কোনো তথ্য সূত্র ছাড়াই দাবি করা হয় – “ভারতের মুসলমানরা প্রতিনিয়ত সরকারিভাবে চুড়ান্ত জুলুম নির্যাতনের শিকার,, অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দিলেন। শরিয়ত মেনে চলার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন রাশিয়ার মুসলমানদের”। এরপরই বিষয়টি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হতে থাকে।

তথ্য যাচাই

প্রেসিডেন্ট পুতিন ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দিলেন। শরিয়ত মেনে চলার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন রাশিয়ার মুসলমানদের” শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি কোনো ধরণের সূত্র উল্লেখ ছাড়াই ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টির সত্যতা যাচাই এর চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

তবে, ইংরেজি এবং রুশ ভাষায় প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায় নি। পাশপাশি আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে পুতিন রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে এমন কোনো সংবাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, আলোচিত দাবির সাথে ব্যবহৃত পুতিনের ছবিটি প্রায় দশ বছর আগে ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট তাতারস্তানের মুফতি ইলদুস ফয়জভের সাথে তোলা। এই বিষয়ে তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ছবি ভিত্তিক প্রতিবেদন ও ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন যথাক্রমে এখানে এবং এখানে।

Screenshot Lemonde

উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাশিয়ার তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রে ইসলামের ১,১০০ বছর উপলক্ষে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া রুশ মুসলিম সেনাদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের প্রশংসা করেছেন।

এছাড়াও, তুরষ্কের টেলিভিশন চ্যানেল “টিআরটি ওয়ার্ল্ড” এর অনলাইন সংস্করণে ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত “নবী মুহাম্মদকে অবমাননা করা বাকস্বাধীনতা নয়-পুতিন” শীর্ষক একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।

এটলাস অব রিলিজিওন এন্ড ন্যাশনালিটিজ এর বরাতে Среда শ্রেডা-2012 এর রিপোর্ট অনুযায়ী রাশিয়ায়; কোনো ধর্ম পালন করেননা এমন নাগরিক এবং নাস্তিক্যতাবাদে বিশ্বাসী নাগরিক ব্যতীত শুধুমাত্র ধর্ম  পালনকারীদের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার দিক দিয়ে ক্রিশ্চিয়ান অর্থোডক্স এর পরেই ইসলাম ধর্ম দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। 

২০১৮ সালের ০৬ মার্চ রাশিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি শেখ “রোয়েল জেন্তিন” আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, “বর্তমান রাশিয়ার ভূখণ্ডে অবস্থিত ভলগা বুলগেরিয়া  রাজ্যে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল ৯২২ সালে, কিয়েভান রুশ রাজ্যে অর্থোডক্স (খ্রিস্টান) ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করারও ৬৬ বছর আগে।  

পুতিন
Screenshot Aljazeera

অর্থাৎ, পুতিন কর্তৃক ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দেওয়া সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাশিয়ার মুসলিম সৈন্যদেরকে পুতিন কর্তৃক প্রশংসা করার বিষয়টি নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায়।

মূলত, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তাতারস্তানের মুফতি ইলদুস ফয়জভের সাক্ষাতের ১০ বছর পুরোনো একটি ছবি সংযুক্ত করে পুতিন ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দেশদুটি অন্যান্য ধর্মের প্রতি কতটা সৌহার্দপূর্ণ এমন তথ্য-ভিত্তিক গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম “আজ তাক” আলোচিত বিষয়ে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সুতরাং, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিতীয় ধর্মের স্বীকৃতি দিলেন’ শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img