খালেদা জিয়ার কেবিনে ধরা পড়া ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক নয় 

গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢোকার চেষ্টার সময় এক যুবককে আটক করা হয়। এ সংক্রান্ত ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, “খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকে পড়া ব্যক্তিটি ভারতের নাগরিক এবং তিনি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন।”

খালেদা জিয়ার

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ অবধি আলোচিত ভিডিওটি প্রায় ২ লাখ ৮৩ হাজার বার দেখা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার ৯ শত পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওটির মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকে পড়া ব্যক্তিটি ভারতের নাগরিক নয় এবং উক্ত ব্যক্তির সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার দাবিটিও সঠিক নয় বরং মোঃ সুজন নামে আটক ব্যক্তির বাড়ি ফরিদপুরে এবং হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে ঢাকার ভাটারা থানা পুলিশের হেফাজতে দিয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি দুইটি ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন। যেখানে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের দুটি ভিডিও দেখানো হয়।  

ভিডিও যাচাই

আলোচিত ভিডিওটিতে দেখানো প্রথম ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘NAYEEM ELLI 2’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “রাতের আধারে খালেদা জিয়ার কেবিনে একি কান্ড।।কে এই গ্রেফতার সুজন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে খালেদা জিয়ার কেবিনে গত ২৩ ডিসেম্বর সুজন নামের এক ব্যক্তির ঢুকে পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন চ্যানেলটির উপস্থাপক। ভিডিওটির কোথাও সুজন নামক ব্যক্তি ভারতের কিংবা সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তী ভিডিওটির অনুসন্ধানে ‘Channel US Bangla’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকতে যাওয়া যুবক ভারতীয়! What is his identify” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত অনুরূপ ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison : Rumor Scanner 

উক্ত ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকার চেষ্টা করা ব্যক্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন ব্যক্তিটি ভারতের বলে তার ধারণা হয়। এছাড়াও তিনি এ বিষয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। 

অর্থাৎ আলোচিত ভিডিওতে খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকার চেষ্টা করা ব্যক্তি ভারতের এবং উক্ত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের দাবি করা হলেও ভিডিওটিতে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

পরবর্তীতে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে অর্থাৎ খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকা ব্যক্তিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে চ্যানেল ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ ডিসেম্বর “খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকতে চাওয়া সেই যুবক দুই দিনের রিমান্ডে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢোকার চেষ্টা করে সুজন নামক এক যুবক। পরবর্তীতে ওই যুবককে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটক করে এবং পরে তাকে ভাটারা থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। 

আটক সুজনের পরিচয়ের বিষয়ে অনুসন্ধানে বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ ডিসেম্বর “খালেদার কেবিনে ঢোকার চেষ্টা: আটক যুবক ২ দিনের রিমান্ডে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আটক সুজনের বাড়ি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চর চাঁদপুরে।

মূলত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর বিকেলে তার কেবিনে ঢোকার চেষ্টা করে ফরিদপুরের সুজন নামক এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ আটক করে এবং ভাটারা থানায় তাকে সোপর্দ করা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে “খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকে পড়া ব্যাক্তি ভারতের ধরা পড়লো সেনাবাহিনীর হাতে” শীর্ষক শিরোনামে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়৷ তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে যে, অধিক ভিউ পাবার আশায় দুইটি ভিন্ন ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

সুতরাং, খালেদা জিয়ার কেবিনে ঢুকে পড়া ব্যক্তি ভারতের, ধরা পড়লো সেনাবাহিনীর হাতে শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে ; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img