প্রবাসীদের ব্যাংকে টাকা পাঠানোর ইতিবাচক বার্তার এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়

সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঘটেছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। এরই জের ধরে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা প্রতিবাদস্বরূপ বাংলাদেশ বৈধ পথে টাকা পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বিরাট অবদান রাখার বদলে হুন্ডি বা অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর ঘোষণা দিচ্ছেন। তার প্রেক্ষিতে, গতকাল (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়, যেখানে দেখা যায়, একজন চাকরিদাতা তার কর্মীদের বেতন দিয়ে তা বৈধ পথে ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠিয়ে রেমিট্যান্স হিসেবে অবদান রাখতে উৎসাহ দিচ্ছেন এবং এক পর্যায়ে প্রায় সবাই বৈধ পথে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাবেন বলে সায় দেন। 

প্রবাসীদের ব্যাংকে

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি প্রায় ৫৫ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৭ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ ছাড়াও আরো কিছু পেজেও আলোচিত দাবিতে ভিডিওটি প্রচারিত হয়। পজিটিভ বাংলাদেশ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বেশ ভাইরাল হয়। 

পজিটিভ বাংলাদেশ নামের ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি প্রায় ৬০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৩ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি আদতে প্রায় চার মাস পুরোনো একটি ভিডিও। চলমান আন্দোলনের পূর্ববর্তী সময়ের একটি পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষাপটে অন্তত গতকাল থেকে প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ১৬ এপ্রিল তারিখে FIRST Class Group নামের একটি ফেসবুক পেজে “আলহামদুলিল্লাহ জেদ্দা সাইডের বেতন দিলাম” শিরোনামে মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। মূল ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্য এবং বক্তব্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। তাছাড়া, ভিডিওটিতে First Class Group এর নামেরও উল্লেখ হতে শোনা যায় যা নিশ্চিত করে এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং প্রায় চার মাস পূর্বের।

Comparison : Rumor Scanner

অপরদিকে, কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন গত পহেলা জুলাই। সহিংসতা এবং সংঘাতের খবরগুলো এরপরের ঘটনা। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রবাসীরা প্রতিবাদস্বরূপ নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাংলাদেশ বৈধ পথে টাকা পাঠিয়ে রেমিট্যান্স খাতে অবদান রাখা বন্ধ করার ঘোষণা দেন। এর বিপরীতে তারা অবৈধ পথ বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর জানান দেন।

মূলত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘটা সহিংসতার প্রতিবাদে সম্প্রতি প্রবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাংলাদেশে বৈধ পথে টাকা পাঠিয়ে রেমিট্যান্স খাতে অবদান রাখা বন্ধ করার ঘোষণা দেন। প্রবাসীদের এমন প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করে দাবি করা হয়, হুন্ডি নয়, ব্যাংকেই টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। কিন্তু, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, FIRST Class Group নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রায় চার মাস পূর্বে গত ১৬ এপ্রিল এই ভিডিওটি পোস্ট করা হয় যেখানে কর্মীদের বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং কর্মীরাও এতে সায় দেন। 

উল্লেখ্য, উক্ত FIRST Class Group নামের পেজে তিনদিন পূর্বে প্রচারিত ভিন্ন একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, তিনি বা তারা বর্তমানেও রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রাখবেন।

সুতরাং, হুন্ডি নয়, ব্যাংকেই টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা শীর্ষক দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ের মর্মে পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • FIRST Class Group – Facebook Post
  • Rumor Scanner’s own analysis 

আরও পড়ুন

spot_img