সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঘটেছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। এরই প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত সন্তানের মায়ের কান্না শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি ১৩ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত কারো মায়ের কান্নার ফুটেজের নয় বরং এটি গত মার্চ মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবম্তিকার আত্মহত্যার পর তার মায়ের কান্নার ভিডিও।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত ১৬ মার্চ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।
সংবাদের বরাতে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ মারা যাওয়া জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার মা। উক্ত সংবাদের ফুটেজের সাথে প্রচারিত সংবাদের ফুটেজের বেশকিছু অংশের হুবহু মিল রয়েছে।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধান করে গত ১৬ মার্চ অর্থাৎ একইদিনে বিবিসি নিউজ বাংলার প্রকাশিত একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদের বরাতে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা সহপাঠী ও এক সহকারী প্রক্টরের সাথে ঝামেলার জের ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে আত্মহত্যা করেন।
এছাড়াও, প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা ছবিটি কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আহত স্কুল শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত মিতার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুর গুজব ছড়ালে রিউমর স্ক্যানার এই বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রচারিত ভিডিওতে নিচের দিকে যুক্ত ফুটেজটির কি-ফ্রেম রিভার্জ ইমেজ সার্চ করে গত ১৬ জুলাই বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে একটি সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর বক্তব্য প্রচার করা হয়। প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত শিক্ষার্থীর বক্তব্যের ফুটেজটির সাথে উক্ত সংবাদের কিছু অংশ হুবহু মিলে যায়।

অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ফুটেজ যুক্ত করে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, চলতি বছরের ১৫ মার্চ সহপাঠী ও এক সহকারী প্রক্টরের সাথে ঝামেলার জের ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে আত্মহত্যা করে ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী। পরদিন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির এক সংবাদে তার মাকে কাঁদতে দেখা যায়। সম্প্রতি, সময় টিভির উক্ত সংবাদের ফুটেজ ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুইটি ভিন্ন ঘটনার ছবি ও ভিডিও করে দাবি করা হয়, ভিডিওটি কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত সন্তানের মায়ের কান্নার ভিডিও। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওতে প্রদর্শিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুই শিক্ষার্থীর কেউই মারা যাননি।
সুতরাং, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত সন্তানের মায়ের কান্না শীর্ষক দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার সংবাদের একটি ফুটেজ প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- somoynews.tv: ‘অবন্তিকাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে’ – বিচার দাবি মায়ের
- BBC News বাংলা: ‘আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম’-ফেসবুক পোস্ট দিয়ে শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা
- BanglaVision News: ‘বাবাকে বলে আসছি, যদি ম’রে যাই বিজয়ের পর যেন আমার লা’শ দা’ফন করে’
- Rumor Scanner’s own analysis