গত ৬ মে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ভারত দাবি করে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক অভিযানে তারা জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তইয়েবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অন্তত গত ৭ মে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকজন সেনা সদস্যের একটি লাশ সদৃশ বস্তু বহন করে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “অনেক ভারতীয় সেনা হতাহত।পাকিস্তান সেনাবাহিনী চিরিকোট সেক্টরের সামনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেকআপ পোস্টটি ধ্বংস করে দিয়েছে।” এছাড়াও, ৮ মে’তে উক্ত ভিডিও প্রচার করে দৃশ্যটি গত ৭ মে কাশ্মীরে হতাহতের দৃশ্য দাবিতেও প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক পাক-ভারত সংঘাতের ঘটনার নয় বরং ২০০৭ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের গান্তামোল্লায় (Gantamulla/Ganthmulla) ভারতীয় সেনা কর্তৃক বিদ্রোহীকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে স্টক ফটোগ্রাফি কোম্পানি অ্যালামির ওয়েবসাইটে প্রচারিত একটি ছবি পাওয়া যায়। উক্ত ছবির দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

দৃশ্যটি সম্পর্কে অ্যালামির ওয়েবসাইটে বলা হয়, “২০০৭ সালের ২ আগস্ট, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর থেকে ৬৫ কিমি (৪০ মাইল) পশ্চিমে গাঁথমুল্লা এলাকায়, ভারতীয় সেনারা বিদ্রোহীদের দেহ বহন করছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উরি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখার (Line of Control/LOC) কাছে দুদিনের বন্দুকযুদ্ধে আটজন সন্দেহভাজন বিদ্রোহী ও দুইজন সেনা সদস্য (একজন কর্মকর্তা সহ) নিহত হয়েছে।” (অনূদিত) এছাড়াও, অ্যালামির ওয়েবসাইটে উক্ত দিনের আরো একাধিক ছবিও পাওয়া যায়।
এছাড়া, উক্ত বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে’র ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্ডিয়া টুডে উক্ত দৃশ্য ধারণ করা ফটোগ্রাফার আলতাফ জারগারের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং তিনি নিশ্চিত করেছেন উক্ত দৃশ্যগুলো তিনি ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদসংস্থা জুমা প্রেসের জন্য ধারণ করেছিলেন।
উল্লেখ্য যে, অ্যালামির ওয়েবসাইটে ফটোগ্রাফারের নাম হিসেবে আলতাফ জারগার এবং কন্ট্রিবিউটর হিসেবে জুমা প্রেসের নাম উল্লেখ রয়েছে।
সুতরাং, ২০০৭ সালে ভারতীয় সেনা কর্তৃক বিদ্রোহীর দেহ বহনের দৃশ্যকে সম্প্রতি পাকিস্তানের হামলায় হতাহত ভারতীয় সেনার দেহ বহনের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।