সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঘটেছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। পরবর্তীতে গত ১৭ জুলাই রাতে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট। পরবর্তীতে ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালু করা হয়।
তার প্রেক্ষিতে, যমুনা টিভির একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি সাম্প্রতিক সময়ে মহাখালীর ডাটা সেন্টারে দুর্বৃত্তদের আগুন দেওয়া নিয়ে করা প্রতিবেদন।

ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুন লাগা দিয়ে যমুনা টিভির প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত বছরের অক্টোবর মাসের একটি প্রতিবেদনকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে ১৮ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সেদিন মহাখালীর খাজা টাওয়ারও সহিংসতার কবলে পড়ে। সে কারণেই সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায় বলে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য। কিন্তু অনুসন্ধানে যমুনা টিভির কোনো প্লাটফর্মেই সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারিত উক্ত আলোচিত ভিডিও প্রতিবেদনটি প্রচারের প্রমাণ মেলেনি।
তবে আরো অনুসন্ধান করে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের (২০২৩) ২৭ অক্টোবর “পুড়ে গেছে ডেটা সার্ভার; কবে স্বাভাবিক হবে ইন্টারনেট সেবা?”- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের সাথে প্রচারিত প্রতিবেদনটির মিল রয়েছে।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সে বছরের ২৬ অক্টোবর মহাখালীর খাজা টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই ভবনে থাকা ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়।
একই তারিখে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনজন নিহত হন।
মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে দুর্বৃত্তদের আগুনে মহাখালীতে কয়েকটি ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি করে বন্ধ করে দেওয়া হয় সারাদেশের ইন্টারনেট সেবা। এরই প্রেক্ষিতে, যমুনা টিভির একটি প্রতিবেদন প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে প্রচারিত ‘প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক সময়ে মহাখালীর ডাটা সেন্টারে দুর্বৃত্তদের আগুন দেওয়া নিয়ে করা প্রতিবেদন’। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৩ সালে মহাখালীর খাজা টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৭ অক্টোবর প্রচারিত একটি প্রতিবেদন। এটির সাথে সাম্প্রতিক ঘটনার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
সুতরাং, যমুনা টিভির পুরোনো প্রতিবেদনকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Jamuna Television- পুড়ে গেছে ডেটা সার্ভার; কবে স্বাভাবিক হবে ইন্টারনেট সেবা?
- Prothom Alo- ইন্টারনেট পুরো ঠিক হয়নি, ভবনে ঢুকে পরিস্থিতি বুঝতে চান সেবাদাতারা
- Rumor Scanner’s Own Analysis