সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঁচজন ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে, যারা মিজোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে৷

উক্ত দাবিতে এক্স-এ প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক অস্ত্রসহ পাঁচজন ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেনি বরং, ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পুলিশের একটি অভিযানের তথ্য ব্যবহার করে ভুয়া দাবিটি প্রচার করা হয়েছে৷
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি’র ওয়েবসাইটে গত ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘Myanmar Militant Group Leader Among 5 Arrested In Transnational Arms Bust: Mizoram Police’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মায়ানমার থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার হচ্ছিল। কিন্তু অস্ত্র নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই পাচারকারীদের গ্রেফতার করে ভারতের মিজোরাম পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মায়ানমারের চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ) এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড পিপল’স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-পি) এই পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং এটি সংগঠন দুটির মধ্যে হতে চলা একটি ব্যবসায়িক লেনদেনের অংশ ছিল। পুলিশের তরফ থেকে আরো জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি মিজোরামের মামিত জেলার পশ্চিম ফেইলেং থানার অন্তর্গত সাইথা নামক একটি গ্রামের বহিরাংশে এই যৌথ অভিযানটি পরিচালনা করা হয়৷ এই অভিযানে ছয়টি একে-৪৭ রাইফেল ও ১০,০৫০টি কার্তুজ এবং ১৩টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। অভিযানে যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সিএনএফ-এর একজন উল্লেখযোগ্য নেতাও রয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের অনলাইন সংস্করণে গত ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
মিজোরাম পুলিশের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে গত ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে৷

বাংলাদেশি গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট ও বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোরের প্রতিবেদনেও আলোচিত পোস্টে থাকা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে এবং মায়ানমার থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশ অস্ত্র পাচার ও মিজোরাম পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার এই যৌথ অভিযানের সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

উপরিউক্ত তথ্যাবলী থেকে নিশ্চিত যে, মায়ানমার থেকে ভারতের মিজোরাম হয়ে অস্ত্র পাচারকালে অস্ত্রসহ পাঁচজন সন্ত্রাসী গ্রেফতারের অভিযানটি মিজোরাম পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালনা করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয় এবং গ্রেফতারকৃতরা মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিএনএফের সদস্য, ভারতীয় সন্ত্রাসী নয়।
সুতরাং, ভারতের মিজোরাম রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক অস্ত্রসহ মায়ানমারের বিদ্রোহীদের গ্রেফতারকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ভারতীয় সন্ত্রাসী গ্রেফতার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- ND TV – Myanmar Militant Group Leader Among 5 Arrested In Transnational Arms Bust: Mizoram Police
- Hindustan Times – Mizoram Arms Recovery: মায়ানমার থেকে অস্ত্র পাচার হচ্ছিল বাংলাদেশে, ভেস্তে গেল যৌথ অভিযানে, সামনে এল ভয়ঙ্কর তথ্য
- Mizoram Police – X Post
- Dhaka Post – মিজোরামে অস্ত্রের বিশাল চালান জব্দ, ইউপিডিএফের সংশ্লিষ্টতার দাবি
- Bangla News 24 – মিয়ানমার থেকে ভারত দিয়ে অস্ত্র আসছিল বাংলাদেশে