বাংলাদেশের প্রথম মাংকিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্যটি গুজব

সম্প্রতি,”বাংলাদেশের প্রথম মাংকিপক্স রোগী বিএসএমএমইউ এ শনাক্ত!” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে প্রথম মাংকিপক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে শীর্ষক তথ্যটি সত্য নয় বরং যে ডাক্তারের বরাতে বিষয়টি প্রচার করা হয়েছে তিনি নিজেই বিষয়টি মিথ্যা বলে আমাদের নিশ্চিত করেছেন।

মূলত, আজ ২৩ মে বিকেল থেকে হঠাৎ-ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম মাংকিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়া সংক্রান্ত একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তথ্যটির সূত্র হিসেবে ডা. আসিফ ওয়াহিদ নামের একজন চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করা হয়।

তবে অনুসন্ধান করে দেশীয় কোন সংবাদমাধ্যমেই বাংলদেশে মাংকিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়া সংক্রান্ত কোন সংবাদ খুঁজে পাওয়া না গেলে তথ্যটির সত্যতা যাচাই এর উদ্দেশ্যে সূত্র হিসেবে দেখানো আসিফ ওয়াহিদ নামের সেই ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ। মুঠোফোন কলে তিনি তথ্যটি সত্য নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন।

রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ফোন কল পেয়ে বিষয়টি অবগত হওয়ার পরপরই তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিষয়টির সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করে একটি পোস্টও দিয়েছেন। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন,  

“আমার নামে Monkey pox নিয়ে যে পোস্ট ফেইসবুকে লিখা হচ্ছে তা আমার আইডি থেকে দেয়া না। এই ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই।”

তাছাড়া সাধারণত দেশে নতুন ধরণের কোনো রোগ ধরা পড়লে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে সংবাদ সম্মেলন করে তা ঘোষণা দেওয়া হয়। যেমন এর আগে করোনা ভাইরাস ও ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্ট এর রোগী পাওয়ার সময়ও আমরা এই উদাহরণ দেখেছি।

এদিকে ছড়িয়ে পরা এই ভুয়া তথ্যক নিয়ে এক জরুরী বার্তায় বিষয়টিকে গুজব বলে নিশ্চিত করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বিবদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

মাংকিপক্স

প্রসঙ্গত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাংকিপক্স নামের একটি রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এই রোগ নিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মাংকিপক্স নামের এক ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ানো এই রোগ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অনেকটা জল বসন্তের ভাইরাসের মতো। তবে এর ক্ষতিকারক প্রভাব কম, এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সংক্রমণের হারও কম। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিরক্ষীয় বনাঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। ইতিমধ্যে পৃথিবীর অন্তত ১২টি দেশের ৮০ জনেরও বেশি লোকের দেহে মাংকিপক্স সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে। 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই সংক্রমণ অস্বাভাবিক কারণ এগুলো এমন দেশে ঘটছে যেগুলো এ ভাইরাসটির স্বাভাবিক আবাসস্থল নয়। এই রোগসাধারণত মৃদু অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এটি খুব সহজে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের ছড়াতে পারে না, এবং মনে করা হয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই মাংকিপক্স ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। মাংকিপক্সের কোন সুনির্দিষ্ট টিকা নেই। তবে গুটিবসন্তের টিকা নিলে তা মাংকিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিয়ে থাকে – কারণ এ দুটি ভাইরাসের অনেক মিল রয়েছে।

Also Read: তামান্না নামের একটি মেয়ের মৃত্যুর কাল্পনিক গল্পকে বাস্তব ঘটনা হিসেবে প্রচার

সুতরাং, বাংলাদেশের প্রথম মাংকিপক্স রোগী বিএসএমএমইউ এ শনাক্ত হয়েছে শীর্ষক তথ্যটি তথ্যটি এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ গুজব।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img