ফিলিস্তিন ফান্ডে টাকা জমার জন্য মোজো কেনাই যথেষ্ট, কিউআর কোড স্ক্যানের প্রয়োজন নেই

ফিলিস্তিন ও ইজরায়েলের চলমান ইস্যুতে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড এর কোমল পানীয় ব্র্যান্ড ‘মোজো’ ঘোষণা করে, মোজাে’র প্রতিটি বিক্রিত বোতলের জন্য এক টাকা করে ফিলিস্তিনে দান করা হবে। ফিলিস্তিনের জন্য তাদের অর্থ সংগ্রহের এ উদ্যোগ ব্যাপক আলোচিত হয়। এ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে মোজো তাদের বোতলের গায়ে উই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন এবং ফান্ড আপডেট দেখার জন্য তৈরিকৃত ওয়েবসাইটের ঠিকানা কিউআর কোড হিসেবে যুক্ত করে। 

মোজোর বোতলের গায়ের সেই কিউআর কোডকে নিয়ে সম্প্রতি কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে– মোজোর বোতলে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান না করলে ফিলিস্তিনের জন্য তৈরীকৃত ফান্ডে কোনো টাকা জমা হবে না। কিংবা মোজোর ফিলিস্তিন ফান্ডে টাকা জমার জন্য কিউআর কোড স্ক্যান করতে হয়৷ 

ফেসবুকে এরকম দাবির কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফিলিস্তিন ফান্ডে ডোনেশনের জন্য মোজো কেনাই যথেষ্ট, এই ডোনেশনের সাথে মোজোর বোতলের গায়ের কিউআর কোড স্ক্যান করা কিংবা না করার কোনো সম্পর্ক নেই।

ফিলিস্তিন ফান্ডে টাকা জমা হওয়ার জন্য মোজো কিনে বোতলের কিউআর কোড স্ক্যান করতে হয় এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার। 

অনুসন্ধানের শুরুতে কিউআর কোডে সংযুক্ত তথ্য দেখার জন্য গুগল লেন্স দিয়ে মোজোর বোতলের লেবেলের কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে সেখানে মোজোর ফিলিস্তিন এক টাকা উদ্যোগের যে ওয়েবসাইট, যেখানে ফান্ড আপডেট দেখা যায় সেই ওয়েবসাইটের ইউআরএল ‘wesupportpalestine.net’ পাওয়া যায়। 

QR code scan using Google lens

এই QR কোড স্ক্যান করার মাধ্যমে ওয়েবসাইটে গিয়ে মূলত ফান্ডের আপডেট জানা যাবে। এতে এক টাকা যোগ হওয়ার কোনো বিষয় নেই। মোজোর ফেসবুক পেজে প্রবেশ করলেও এমন তথ্যই পাওয়া যাবে। তাদের ফেসবুক পেজের পোস্টগুলোর ক্যাপশনে লেখা থাকে– “ফান্ড আপডেট জানতে ভিজিট করো www.wesupportpalestine.net অথবা মোজো বোতলে থাকা QR কোডটি স্ক্যান করো। ” অর্থাৎ,  এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কিংবা কিউআর কোডের মাধ্যমে একই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ফান্ড আপডেট পাওয়া যাবে৷ প্রতিবার প্রবেশে, হোক সেটা কিউআর কোডের মাধ্যমে কিংবা সরাসরি ইউআরএলের মাধ্যমে– এতে ১ টাকা ফান্ডে যুক্ত হওয়ার কোনো বিষয় নেই৷ 

Mojo’s Facebook post

কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে যে এক টাকা ফান্ডে জমা হয়নি সেটি পরীক্ষার জন্য গত ১১ এপ্রিল, ১৬ এপ্রিল এবং ১৮ এপ্রিল তিনটি ভিন্ন দিনে রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন অনুসন্ধানকারী মোজো কিনে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেছেন। মোজো কেনার পর স্ক্যান করার আগে ফিলিস্তিনের জন্য মোজোর ফান্ড সংগ্রহের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা ফান্ডের পরিমাণ তিনি নোট করেছেন এবং পরবর্তীতে স্ক্যান করার পর পুনরায় সেই ফান্ডের পরিমাণ যাচাই করে অভিন্ন পরিমাণ পেয়েছেন। অর্থাৎ, স্ক্যান করার কারণে ফান্ডে কোনো অর্থ যোগ হয়নি। অর্থ যোগ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে মূলত কেবল তাদের ফান্ড আপডেট ওয়েবসাইট ভিজিট হচ্ছে। যদি কিউআর কোডের মাধ্যমে তাদের ফান্ড আপডেটের ওয়েবসাইটে প্রবেশে এক টাকা যোগ হতো, তাহলে বিষয়টা প্রতি ভিজিটে এক টাকা যোগ হওয়ার মতো দাঁড়াত। আদতে মোজো এই ফান্ডে প্রতি বোতল বিক্রি হওয়ার জন্য এক টাকা দিচ্ছে।

Screengrab from Moja Palestine fund update website

বিষয়টি নিয়ে আমরা মোজো কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। মোজো পানীয়র মালিক প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজের ব্র্যান্ড ম্যানেজার আদনান শফিকের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি এটিকে সঠিক নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছেন। বোতলের গায়ে কিউআর কোড দেওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি এটিকে স্বচ্ছতা নিশ্চিতমূলক পদক্ষেপ বলে জানান। তিনি আরও বলেন, “URL এর বদলে কেউ চাইলে সহজেই কিউআর কোড স্ক্যান করেও যাতে সংগ্রহকৃত ফান্ডের পরিমাণ দেখতে পারে, এজন্যই কিউআর কোডটি দেওয়া। ফিলিস্তিনের ফান্ডে টাকা জমা হতে কিউআর কোড স্ক্যান করার কোনো প্রয়োজন নেই। পানীয়টি কিনা-ই যথেষ্ট।”

কিভাবে ওই ওয়েবসাইটে ফান্ড আপডেট হয় সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “ডিস্ট্রিবিউটর থেকে দোকানে যে সেলস হয় এবং সেখান থেকে যে ইনফরমেশনগুলো আমাদের কাছে আসে সেগুলো সার্ভারে অ্যাড করা হয়।”

মূলত, বাংলাদেশের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড এর কোমল পানীয় ব্র্যান্ড মোজো কর্তৃপক্ষ স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এবং ফান্ড আপডেট দেখার বিষয়কে সহজ করতে বোতলের গায়ে ফান্ড আপডেটের জন্য তৈরি ওয়েবসাইটের ইউআরএল টি কিউআর কোড হিসেবে দিয়েছে। যাতে করে যে কেউ সহজেই কিউআর কোডটি স্ক্যান করে সংগ্রহকৃত ফান্ডের পরিমাণ দেখতে পারেন। এটি স্ক্যান করা বা না করার সাথে ফিলিস্তিনের ফান্ডে টাকা জমা হওয়ার কোনোরকমের সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, ‘মোজোর বোতলের কিউআর কোড স্ক্যান না করলে ফিলিস্তিনের জন্য তৈরীকৃত ফান্ডে কোনো টাকা জমা হবে না’ মর্মে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s Analysis
  • Statement from Mojo authority  

আরও পড়ুন

spot_img