কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের চেষ্টার পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দাবি প্রচার করা হয়েছে, উগ্র ইসলামপন্থীরা দিনাজপুরের খ্যাতনামা কান্তজিউ মন্দিরের জায়গায় মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা করছে। দাবিটির সাথে কান্তজিউ মন্দিরের একটি ছবিসহ আরো দুইটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।

কান্তজিউ মন্দির

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ভারত ভিত্তিক এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের চেষ্টার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, এটি ২০২৪ সালের মার্চের ঘটনা।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে সাম্প্রতিক সময়ে এরূপ কোনো ঘটনার সপক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, মূলধারার সংবাদমাধ্যম কালবেলার ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ২৩ মার্চে “কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে নির্মাণ হচ্ছে মসজিদ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “দিনাজপুরের কাহারোলে ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এই স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। কান্তনগর গ্রামে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমিতে মসজিদ নির্মাণের ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনাজপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাকারিয়া জাকা এ কাজে সহযোগিতা করছেন। গত ১ মার্চ সবকিছু জেনেশুনেও মসজিদ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তিনি।”

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত একটি ছবির সাথে প্রচারিত দাবিতে কান্তজিউ মন্দিরের ছবির সাথে সংযুক্ত অন্য দুইটি ছবির একটির হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়। অপর ছবিটির প্রেক্ষাপট জানা না গেলেও প্রচারিত উক্ত ছবিটি ২০২৩ সালের এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।

এ বিষয়ে পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো, ডয়চে ভেলেসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উক্ত ঘটনাটি নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ বা প্রতিবাদ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় দিনাজপুরের কাহারোলে ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। 

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় এসেছিলেন। তিনি আমাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলেছেন। এই জমি তো এক সময় খাস জমি ছিল। পরে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের নামে রেকর্ড করে নিয়েছে। এখানে যে মসজিদটি ছিল সেটা ৭৫-৮০ বছরের পুরনো। টিনশেড ছিল, মুসল্লিদের জায়গা হতো না, সেই কারণে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলে তিনতলার ভিত দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। তিনি এছাড়াও বলেন, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের আগে থেকেই কাজ বন্ধ। জেলা প্রশাসনই বরাদ্দ দিয়েছিল, এখন তারা (জেলা প্রশাসন) অস্বীকার করছে।

সুতরাং, কান্তজিউ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণের চেষ্টার পুরোনো ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img