আজকের পত্রিকা’র ফটোকার্ড বিকৃত করে মির্জা ফখরুলের নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি, দৈনিক আজকের পত্রিকা’র সূত্রে ‘ক্ষমতায় গেলে বাইডেন ও ঋষি সুনাক এর বিচার করা হবে- মির্জা ফখরুল ইসলাম’ শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং উল্লিখিত দাবিতে দৈনিক আজকের পত্রিকাও কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে জো বাইডেনকে নিয়ে করা মির্জা ফখরুল ইসলামের মন্তব্য নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদের ফটোকার্ডকে বিকৃত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ফটোকার্ডটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো রয়েছে।

পরবর্তীতে উল্লিখিত তথ্যের সূত্র ধরে দৈনিক আজকের পত্রিকার ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে, গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে গত ১০ সেপ্টেম্বর “বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে সরকার ভাবছে জিতে গেছে: মির্জা ফখরুল ইসলাম” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত একটি ফটোকার্ড (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি আলোচিত ফটোকার্ডে সংযুক্ত মির্জা ফখরুল ইসলামের ছবির সাথে আজকের পত্রিকার ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডে সংযুক্ত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Photocard Comparison by Rumor Scanner

তবে আলোচিত ফটোকার্ডে মির্জা ফখরুল ইসলামের মন্তব্য বলে জো বাইডেন এবং ঋষি সুনাককে বিচার করার কথা উল্লেখ করা হলেও আজকের পত্রিকার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোর্কাডে তা উল্লেখ নেই।

এছাড়া, একই দিনে দৈনিক আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে “বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে সরকার ভাবছে জিতে গেছে: মির্জা ফখরুল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রোববার (১০ সেপ্টেম্বর)  রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে কোনো সেলফিই আপনাদের রক্ষা করতে পারবেন না।’ 

ওবায়দুল কাদেরকে পরামর্শ দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমি বলি, আমার পরামর্শটা নেবেন? সেটা হচ্ছে যে ওই ছবিটা বাঁধিয়ে গলায় নিয়ে ঘোরেন আর জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, আমেরিকা ও বাইডেন আমাদের (সরকার) সঙ্গে আছে।’ 

সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এত নিঃস্ব হয়ে গেছেন যে বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে ঢোল পেটাচ্ছেন আমরা (সরকার) জিতে গেছি।’ 

তাছাড়া, উক্ত বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনগুলো দেখুন ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো। 

তথ্যটি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য দৈনিক আজকের পত্রিকার সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এ বিষয়ে আজকের পত্রিকা ডিজিটাল কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্টের ইনচার্জ হযরত আলী গাজী রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, এই ধরনের ফটোকার্ড আমরা করিনি। আমাদের মূল ফটোকার্ডের ফন্টের সাথে তুলনা করলেই দেখবেন, দুইটার ফন্ট আলাদা। কেউ আসলে অসৎ উদ্দেশ্যে এই কাজ করে থাকতে পারে।

অর্থাৎ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জো বাইডেন এবং ঋষি সুনাকের বিচার করা হবে এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং বর্তমান সরকারকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। 

মূলত, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ১০ সেপ্টেম্বর এক স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের করা পূর্বের এক বক্তব্যে জেরে তিনি “বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে সরকার ভাবছে জিতে গেছে…” শীর্ষক মন্তব্য করেন৷ উক্ত বক্তব্যের ভিত্তিতে জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার ফেসবুক পেজে “বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে সরকার ভাবছে জিতে গেছে: মির্জা ফখরুল ইসলাম” শীর্ষক তথ্য উল্লেখ করে ফটোকার্ড প্রকাশিত হয়। উক্ত ফটোকার্ডকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে জো বাইডেন ও ঋষি সুনাককে বিচার করা হবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন মন্তব্য করেছেন উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত আট মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে অপপ্রচারের বিষয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, ক্ষমতায় গেলে বাইডেন ও ঋষি সিনাক এর বিচার করা হবে- মির্জা ফখরুল ইসলাম’’ শীর্ষক মন্তব্যটি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img