মীর মুগ্ধের বাবার বক্তব্য দাবিতে ইয়ামিনের বাবার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, জুলাই আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা একটি সংবাদ সম্মেলনে তার ছেলে আন্দোলনকারীদের পানি খাওয়াতে গিয়ে বা পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়ে নিহত হননি বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুক প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওতে বক্তব্যরত ব্যক্তি জুলাই আন্দোলনে নিহত মীর মুগ্ধের বাবা নয় বরং তিনি একই আন্দোলনে নিহত ইয়ামিনের বাবা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটির শুরুর মুহুর্তে দৈনিক কালবেলা’র একটি লোগো দেখতে পায়।

পরবর্তীতে কালবেলার লোগো এবং ভিডিওর ব্যক্তির বক্তব্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমেও কালবেলার ফেসবুক পেজ কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। যা থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, পরবর্তীতে কালবেলার অনলাইন মাধ্যমগুলো থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তবে দৈনিক কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে গত ৮ মে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পদ নিয়ে দ্ব/ন্দ্ব শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একই ঘটনার ভিন্ন এঙ্গেল থেকে ধারণ করা আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায়, আলোচিত বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি জুলাই আন্দোলনে নিহত হওয়া ইয়ামিনের বাবা। তিনি মূলত তার ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে টানতে গিয়ে, ‘আমার ছেলে ফেসবুকে কোনো পোস্ট দিয়ে শহীদ হয়নি। আমার ছেলে আন্দোলনে পানি খাওয়াতে যেয়ে শহীদ হয় নাই। আমার ছেলে কোথাও পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হয় নাই। আমার ছেলে সাধারণ জনগণ-ছাত্রদেরকে যখন পুলিশের এপিসি থেকে গুলি ছড়া হচ্ছিল তখন সেই পুলিশের গুলি থেকে ছাত্র জনতাকে বাঁচানোর জন্য সেই এপিসির উপরে উঠে যায় এবং সেই ঢাকনা বন্ধ করতে যায়। তখন পুলিশ এপিসি থেকে নিচে নেমে তার বুকের বাম পাশে ক্লোজ ডিস্টেন্স থেকে তাকে শর্টগান দিয়ে গুলি করে।’ শীর্ষক কথাগুলো বলেন।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম Jagonews24 এর ওয়েবসাইটে গত ৮ মে আমাদের আবেগের কি কোনো মূল্য নেই: শহীদ ইয়ামিনের বাবা শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভা শেষে তারিখ উল্লেখ এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা জানান শহীদ মীর মাহমুদুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। একই সঙ্গে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আকবর কামালের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানেই এই নিয়োগ নিয়ে শহীদ ইয়ামিনের বাবা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন তীব্র আপত্তি জানান। এসময় তাকে কথা বলতে দেওয়া হলে তিনি জানান নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত সিইও কোনো শহীদ পরিবারের সদস্য নয়। তারা এই পদে কোনো শহীদ পরিবারের সদস্যকে চান বলে জানান তিনি। পাশাপাশি কোনো শহীদ পরিবারের সদস্য ব্যতিত অন্যকেউ তাদের আবেগ অনুভূতির কথা বুঝতে পারবেন না জানিয়ে তিনি তার সন্তানের মৃত্যুর ভয়াবহতার বর্ণনা করেন।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওতে বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা নন।

সুতরাং, মীর মুগ্ধের বাবা ‘আমার ছেলে আন্দোলনকারীদের পানি খাওয়াতে গিয়ে বা পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়ে নিহত হননি’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img