সম্প্রতি, কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার মারা গেছেন শীর্ষক দাবিতে বেশকিছু গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
গণমাধ্যমে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন দিনকাল, ডেইলি ক্যাম্পাস, বাংলাদেশ টুডে, বাহান্ন নিউজ, ডিবিসি নিউজ, আমাদের সময়, বাংলাভিশন, জুমবাংলা, দৈনিক শিক্ষা, মানবজমিন এবং দৈনিক পূর্বকোণ।
ভোরের কাগজ পত্রিকার ওয়েবসাইটে ১৬ ফেব্রুয়ারি একই দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে। একইদিন পত্রিকাটির প্রিন্ট সংস্করণেও একই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়াও, মূলধারার সংবাদমাধ্যম “প্রতিদিনের বাংলাদেশ”, ও “ঢাকা মেইল” এই বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করে পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ফেলে। পূর্ববর্তী ভার্সনের কোনো আর্কাইভ কপি পাওয়া সম্ভব হয়নি।
একই দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডায় স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় সড়ক দুর্ঘটনার পড়েন বাংলাদেশি চার শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান, অ্যাঞ্জেলা বারৈ, আরিয়ান দীপ্ত ও নিবিড় কুমার। এর মধ্যে নিবিড় কুমার বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে। দুর্ঘটনার সময় নিবিড় চালকের আসনে ছিলেন।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “কানাডা প্রবাসী অনেকে ফেইসবুকে লিখেছেন, টরন্টো নগরীর অদূরে ৪২৭ হাইওয়ে ও ডানডাস ইন্টারসেকশনের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে গাড়িটি। সড়ক বিভাজকে লেগে গাড়িটি উল্টে গিয়েছিল। নিবিড় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় শাহরিয়ার ও দীপ্ত ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় অ্যাঞ্জেলার।”
এই দুর্ঘটনার বিষয়ে কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নিবিড়ও এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে টুইটারে কানাডার অন্টারিও প্রভিনসিয়াল পুলিশের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি টুইট ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে এ ঘটনার বিষয়ে বলা হয়, দুর্ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন এবং গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
তবে মৃত তিনজন এবং আহত একজনের নাম উল্লেখ করা হয়নি টুইট ভিডিওতে।
সঙ্গীতশিল্পী কিশোর দাস গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় ভোর প্রায় সাড়ে চারটায় এক ফেসবুক পোস্টে (আর্কাইভ) এবং এবং গীতিকার ও লেখক শহীদ মাহমুদ জঙ্গী একই দিন ভোর প্রায় ছয়টায় আরেক ফেসবুক পোস্টে (আর্কাইভ) জানান, নিবিড়ের কাকা অভিজিৎ এবং বাবা কুমার বিশ্বজিৎ তাদের জানিয়েছেন যে নিবিড় আগের চেয়ে ভালো আছেন।
একইদিন (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২:৫৭ মিনিটে কানাডা প্রতিনিধির বরাতে জাতীয় দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “নিবিড়ের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানিয়েছেন তার চাচা অভিজিত দে। সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিবিড়কে তিন দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি।”
সেদিনই (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কুমার বিশ্বজিতের বরাতে বলা হয়, “নিবিড়ের চিকিৎসার এখনো দুইটা স্টেজ আছে। সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় যদি সেই দুটি স্টেজ সুন্দরভাবে পার করে আসতে পারি, তখন বলব, শতভাগ সফল।”
কুমার বিশ্বজিৎ প্রথম আলো’কে বলেছেন, “নিবিড়ের অবস্থা এখন অপরিবর্তিত। কোনো অবনতি নেই। কানাডার ডাউন টাউনের সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। আর নিবিড়ের সার্জারির দায়িত্বে যিনি qআছেন, তিনি নিউরোর সবচেয়ে ভালো সার্জন।”
পরবর্তীতে কানাডার সংবাদমাধ্যম ‘Toronto Star’ এর ওয়েবসাইটে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমারকে সেন্ট মাইকেল হাসপাতালের একটি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে এবং তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে।
মূলত, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনার গুরুতর আহত হন সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার। এ বিষয়ে গত ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশের বেশকিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নিবিড় মারা গেছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নিবিড় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সুতরাং, কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার নিহত হয়েছেন দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।