সম্প্রতি “আয়াতকে ৬ টুক’রো করে হ’ত্যা, আসামী আবীরকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গনপি’টুনি দিয়ে মেরে ফেলে” শীর্ষক একটি দাবি কিছু ভুঁইফোড় সংবাদমাধ্যমের বরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আয়াত হত্যার মূল আসামিকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার দাবিটি সঠিক নয় বরং আসামী আবীরকে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষুদ্ধ জনতা কর্তৃক মারার চেষ্টাকে গণপিটুনিতে মৃত্যুর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। তার দাদা নাতনির সন্ধান চেয়ে পিবিআইয়ের (পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) কাছে আবেদন করেন। পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবীরকে আটক করে।
২৫ নভেম্বর পিবিআই জানিয়েছিল, ‘মুক্তিপণের’ জন্য শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণ করে খুন করেছে তাদের এক ভাড়াটিয়ার ১৯ বছরের ছেলে আবীর আলী। শিশুটিকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয় সে। ২৬ নভেম্বর আসামী আবীর আলীকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের আবেদনের জন্য আসামী আবীরকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
আবীরকে এদিন আদালতে নেওয়ার খবরে আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত হন শখানেক মানুষ। আবীরকে দেখে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আয়াতকে হত্যার জন্য তারা আবীরকে লক্ষ্য করে চিৎকার করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মারতেও যান। শুনানি শেষে আবীরকে আদালত থেকে বের করার সময়ও মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী সেলিম উল্যাহ চৌধুরী বলেন, “আদালত কক্ষে আনার সময় এবং শুনানি শেষে চলে যাওয়ার সময় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধরের চেষ্টা করেছিল। তবে অতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত থাকায় কিছু করতে পারেনি।”
এ ঘটনার বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমেও (আজকের পত্রিকা, সময় নিউজ) একই তথ্য এসেছে।
অর্থাৎ, আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষুব্ধ জনতা আসামী আবীরকে মারতে চেষ্টা করেছিল। তবে অতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত থাকায় কিছু করতে পারেনি।
তাছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে আসামী আবীরকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার বিষয়ে কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজের ঘটনায় আবীর আলী নামে এক আসামীকে আটক করে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড আবেদনের জন্য আদালত প্রাঙ্গণে নেওয়া হলে বিক্ষুব্ধ জনতা আবীরকে মারতে চেষ্টা করেছিল। তবে অতিরিক্ত পুলিশ উপস্থিত থাকায় তারা কিছু করতে পারেনি। এই ঘটনাকে পরবর্তীতে “আসামী আবীরকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গনপি’টুনি দিয়ে মেরে ফেলে।” শীর্ষক শিরোনামে কিছু ভুঁইফোড় সংবাদমাধ্যমের বরাতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর শিশু আয়াতের মৃতদেহের খণ্ডিত অংশের সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।
সুতরাং, শিশু আয়াত হত্যার আসামী আবীরকে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষুদ্ধ জনতা কর্তৃক মারার চেষ্টাকে গণপিটুনিতে মৃত্যুর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।