সম্প্রতি “দেশে গ্যাসের সংকটের কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না! অন্যদিকে ভারতে এলপিজি গ্যাস রপ্তানি করা হচ্ছে!” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশের গ্যাস সংকট কালে ভারতে এলপিজি গ্যাস রফতানি শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর। কারণ, বাংলাদেশে এলপিজি গ্যাস নির্ভর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই বরং বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এলএনজি গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
কী-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম BBCNews এর ওয়েবসাইটে চলতি মাসে ৪ জুলাই “বিদ্যুৎ লোডশেডিং: গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত, কমে গেছে সরবরাহ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক খোলাবাজার বা স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে না।” অর্থাৎ দেশের গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণ হচ্ছে এলএনজি গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়া।
এ প্রতিবেদন থেকে বুঝা যায়, দেশের গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মূলত এলএনজি গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
অপরদিকে বাংলাদেশের মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম Banglanews24.com এ ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি “‘প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে এলপিজিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটিতেও বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, কলকারখানা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছাড়া অন্য সব খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে এলপিজির ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে।
এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যম সমকালে ২০১৮ সালের ১৩ মে প্রথম এলপিজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় নৌ-কল্যাণ ফাউন্ডেশন ট্রেডিং কোম্পানি (এনকেএফটিসিএল) দেশে প্রথমবারের মতো ৪৫০ মেগাওয়াটের এলপিজিভিত্তিক প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এনকেএফটিসিএলের এই উদ্যোগ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
মূলত, বাংলাদেশ ওমান, কাতার ইত্যাদি দেশগুলো থেকে এলএনজি গ্যাস আমদানি করে থাকে। যার একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এলপিজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও বাংলাদেশে এলপিজি গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই৷ ফলে বাংলাদেশে এলপিজি গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করারও কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ত্রিপুরায় এলপিজি রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ৮২ টন এলপি গ্যাস রপ্তানি করা হয়েছে।
সুতরাং, দেশে গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়া সত্ত্বেও ভারতে এলপিজি গ্যাস রফতানি করার দাবিটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
BBC News: বিদ্যুৎ লোডশেডিং: গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত, কমে গেছে সরবরাহ
Banglanews24.com: ‘প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে এলপিজিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে