সম্প্রতি, পাঠ্য বইয়ে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠে এক যুবক ও যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার দৃশ্য রয়েছে দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠে যুবক যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার ছবি থাকার বিষয়টি সত্য নয় বরং মূল বইয়ে থাকা ছবিকে এডিট করে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উক্ত দাবির সত্যতা যাচাইয়ে বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম। এর অংশ হিসেবে দাবিকৃত ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশন পর্যালোচনা করা হয়।
দাবিকৃত একটি পোস্টের কমেন্টে ইসরাত জাহান নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, বইটি এইচএসসির জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্রের, যার লেখক গাজী আজমল।
দাবির প্রেক্ষিতে প্রমাণ হিসেবে কমেন্টে বইয়ের একটি ছবিও সংযুক্ত করেছেন ইসরাত। কমেন্টে সংযুক্ত ছবিতে বইয়ের উপরের অংশ দেখে বোঝা যায় বইটি জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র বইয়ের ১৮০ পৃষ্ঠা।
সংযুক্ত করা উক্ত ছবির সাথে দাবিকৃত ছবির অমিলও লক্ষ করা যায়। এ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন যুবক এক শিশুকে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় শ্বাস দিচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগ বইয়ের পৃষ্ঠা দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবি এবং ভাইরাল পোস্টের কমেন্ট থেকে প্রাপ্ত বইয়ের বৈসাদৃশ্যতা।
পরবর্তীতে নিজ সূত্রের মাধ্যম লেখক গাজী আজমল এর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্রের ২০২১ সালে মুদ্রিত অষ্টম সংস্করনের প্রয়োজনীয় কিছু ছবি সংগ্রহ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে এই বইয়ের ১৮০ পৃষ্ঠায় কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠ নেই।
বইটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে ২৪৭ পৃষ্ঠায় কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠ পাওয়া যায়, তবে সেখানে থাকা ছবির সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবির কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
একই বইয়ের ২০২০ সালে মুদ্রিত সপ্তম সংস্করচণের কিছু ছবিও সংগ্রহ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এ সংস্করণের ১৮০ পৃষ্ঠায় মূল ছবিটি দেখা যায়।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবিটি সাথে বইয়ে থাকা ছবির অমিল দেখা যায়। দুইটি ছবি পাশাপাশি রেখে পার্থক্য করলে দেখা যায় মূল বইয়ে থাকা ছবির শিশুকে এডিট করে নারী বানানো হয়েছে।
মূলত, ‘কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠে এক যুবক ও যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার ছবি রয়েছে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি লেখক গাজী আজমল এর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্রের ২০২০ সালে মুদ্রিত সপ্তম সংস্করণের। মূল বইয়ে একজন যুবক কর্তৃক কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় এক শিশুকে শ্বাস দেওয়ার দৃশ্য রয়েছে। সে ছবিকেই ফটোশপের সহায়তায় এডিট করে যুবক ও যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার ছবি বানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের একটি ছবি ও ক্যাপশন এডিট করে ‘কাগজ দিয়ে ভোকাল কর্ড বানিয়ে সিগারেট পান করা যায়’ শীর্ষক তথ্য পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যবইয়ে রয়েছে দাবি করা হলে তা বিষয় নিয়ে ফ্যাক্টচেক করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, পাঠ্য বইয়ে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পাঠে এক যুবক ও যুবতীর চুম্বনরত অবস্থার দৃশ্য রয়েছে দাবিতে প্রচারিত ছবিটি এডিটেড বা বিকৃত।
তথ্যসূত্র
- Analysis of Rumor Scanner Team.
- Gazi Ajmol Biology 2nd Part 2021 Edition.
- Gazi Ajmol Biology 2nd Part 2020 Edition.