ইসকন সদস্যের নয়, অস্ত্র চালানোর ভিডিওটি কথিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এরই প্রেক্ষিতে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। সে সময় সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

সম্প্রতি, ইসকন সদস্য অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে অস্ত্র চালানো ব্যক্তি কোনো ইসকন সদস্য নয় বরং, কথিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর অস্ত্র চালনার পুরোনো একটি ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের থাইল্যান্ড ভিত্তিক গণমাধ্যম থাইরাথ টিভির ফেসবুক পেজে গত ০২ অক্টোবরে ‘แบบนี้ก็ได้หรอ! หลวงพี่โชว์ความแม่น ลั่นไกสนั่นป่า’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর সাদৃশ্যতা লক্ষ্য করা যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটিতে তাকে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মর্মে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে থাইল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম থাই পিবিএস এর ওয়েবসাইটে গত ০৩ অক্টোবরে “The Buddhist Office has ordered the search for the “monk who practiced shooting a gun”, indicating inappropriate behavior. (স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষান্তরিত)” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সংবাদ প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত ভিডিওটির স্ক্রিনশটের সংযুক্তিসহ বলা হয়, বৌদ্ধ অফিস থেকে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়ে একটি তদন্ত করা হচ্ছে। ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তি যদি কোনো বৌদ্ধ মন্দির বা মঠের সন্ন্যাসী হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে সতর্ক করার জন্য মঠাধ্যক্ষকে জানানো হবে। উক্ত ব্যক্তির এরূপ কার্যক্রম একজন সন্ন্যাসীর ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত এবং এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসে সংকট তৈরি করেছে। তবে, তদন্তটির ফলাফল সম্পর্কে জানা যায়নি।

একই বিষয়ে থাই মিডিয়া আউটলেট খাওসোড অনলাইনে গত ০১ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত দৃশ্যের স্ক্রিনশটের সংযুক্তিও পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ০১ অক্টোবরে ফেসবুকে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে যেখানে একজন ব্যক্তি সন্ন্যাসীর বেশে গুলি করছেন। তবে, ভিডিওটির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তাছাড়া, ভিডিওটি গত ০১ অক্টোবর থেকেই অনলাইনে বিদ্যমান আছে। অপরদিকে গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। অর্থাৎ, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আটক হওয়ার আগে থেকেই প্রচারিত ভিডিওটি অনলাইনে বিদ্যমান আছে।

সুতরাং, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ঘটনায় ইসকন সদস্য অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে দাবিতে কথিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর গুলি চালনার পুরোনো একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img