পর্তুগাল-স্পেন সীমান্তের একটি সেতুকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু হিসেবে উল্লেখ করে সেতুটি গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম লিখিয়েছে শীর্ষক একটি দাবি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসছে।
সম্প্রতি প্রচারিত এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
একই দাবিতে ২০২২ সালে কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
এছাড়া, গেল বেশ কয়েক বছর ধরেই কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি দ্বীপকে যুক্ত করে নির্মিত একটি সেতুকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু শীর্ষক আরেকটি দাবিও নজরে এসেছে রিউমর স্ক্যানার টিমের।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন- কালের কণ্ঠ (২০১৮), বাংলাদেশ প্রতিদিন (২০১৮), ডিএমপি নিউজ (২০১৮),সমকাল (২০১৫) এবং দ্য ঢাকা টাইমস (২০১৩)।
একই দাবিতে বিগত বছরগুলোয় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট দেখুন
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, পর্তুগাল ও স্পেনের মধ্যকার একটি সেতুকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু হিসেবে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে উঠেছে দাবি করা হলেও আদতে গিনেজ রেকর্ডসের ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য নেই। তাছাড়া কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আরেকটি সেতু বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু হিসেবে প্রচার হয়ে আসলেও সেতুটি কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সেতুর চেয়ে প্রায় ২২ ফুট ছোট।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর ক্যাপশনে ‘Atlas Obscura’ এর একটি প্রতিবেদনের লিংক যুক্ত রয়েছে।
মার্কিন অনলাইন ম্যাগাজিন ‘Atlas Obscura’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ১৫ মে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি পড়ে সেখানে সেতুটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সেতু হিসেবে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইটে স্থান পেয়েছে শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইটে কিওয়ার্ড সার্চ করে এ বিষয়ে কোনো তথ্য না পেয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ভিন্ন ভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করে মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ‘National Geographic’ এর স্প্যানিশ সংস্করণে ২০২০ সালের ৩ জুন একই সেতুর বিষয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকও সেতুটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সেতু হিসেবে উল্লেখ করেছে৷
তবে এই প্রতিবেদনেও সেতুটির নাম গিনেজ রেকর্ডসে এসেছে শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
আলোচিত সেতুটি ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় বলে জানিয়েছে স্প্যানিশ ম্যাগাজিন Lavanguardia।
অধিকতর অনুসন্ধানে স্পেনের একাধিক সংবাদমাধ্যমে (ok diario, Lavanguardia) এই সেতু সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পড়ে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রতিবেদনগুলোতে সেতুটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সেতু হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সেতুটি গিনেজ রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছে শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, আলোচিত সেতুটিকে সংবাদমাধ্যমে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু হিসেবে উল্লেখ পাওয়া গেলেও সেতুটি গিনেজ রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছে শীর্ষক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সেতুটির বিষয়ে কী জানা গেছে?
গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে “বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু” শীর্ষক দাবির পক্ষে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে বেশকিছু ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইটের (curiosity, scuba news) একই দাবির পক্ষে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
‘Atlas Obscura’ এরও ২০১০ সালে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনের সূত্র হিসেবে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি লিংক সংযুক্ত রয়েছে।
উক্ত লিংকের সূত্র ধরে ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আলোচিত সেতুটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু শীর্ষক দাবিটি ভিত্তিহীন। প্রতিবেদনে স্থানীয় রেস-বোট মালিক বব কক্সের বরাতে বলা হয়, “এটি এমনই এক মিথ্যা যা ১৮৮০ সাল থেকে তারা পর্যটকদের বলে আসছে।”
এছাড়া, আলোচিত দুই সেতুর দৈঘ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পর্তুগাল-স্পেন সীমান্তের সেতুটির দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলেও কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি দ্বীপকে যুক্ত করে নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট। অর্থাৎ, স্পেন-পর্তুগালের মধ্যকার সেতুটি কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সেতুর চেয়ে প্রায় ২২ ফুট ছোট।
মূলত, পর্তুগাল ও স্পেনের মধ্যকার ২০০৮ সালে নির্মিত একটি সেতুকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু হিসেবে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ নাম উঠিয়েছে শীর্ষক একটি দাবি প্রচার হয়ে আসলেও অনুসন্ধানে দেখা যায়, গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সেতুটির বিষয়ে এমন কোনো রেকর্ড নেই। তাছাড়া, এই সেতুর চেয়ে ২২ ফুট লম্বা কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আরেকটি সেতুকেও বিগত কয়েক বছর ধরে গণমাধ্যম ও ফেসবুকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু হিসেবে দাবি করা হলেও স্থানীয়রা এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন।
সুতরাং, পর্তুগাল ও স্পেনের মধ্যকার একটি সেতুকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু হিসেবে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে উঠেছে এবং কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আরেকটি সেতু বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম আন্তর্জাতিক সেতু হিসেবে প্রচার হয়ে আসছে ; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- National Geographic: EL PUENTE INTERNACIONAL MÁS PEQUEÑO DEL MUNDO
- National Geographic: A Thousand Islands of Summer
- Lavanguardia: El puente internacional más pequeño del mundo ¡está en España!
- Atlas Obscura: Zavikon Island