ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ বিভাজনকারী দেয়াল ভাঙার এই ভিডিওটি পুরোনো

ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা ‘বাধ্যতামূলক’, এবং এই পোশাক বিধি মেনে চলা নিয়ে দেশজুড়ে রয়েছে ‘কঠোর নিয়মাবলি’। সম্প্রতি তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অন্তর্বাস পরে ঘুরে হাঁটার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নারীদের উপর আরোপিত কঠোর পোশাকবিধির ‘প্রতিবাদ’ হিসেবে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঘটনার পর সাদা পোশাকধারী কিছু ব্যক্তি তাকে ‘জোরপূর্বক’ একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যান বলে গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র আমির মাহজব দাবি করেছেন, পুলিশের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে ঐ শিক্ষার্থী মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং গুরুতর মানসিক চাপে ছিলেন। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ঐ শিক্ষার্থীর অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে।

এই পরিস্থিতিতে, ইরানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের মধ্যকার লিঙ্গ বিভাজনকারী দেয়াল ভেঙে ফেলেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ বিভাজনকারী দেয়াল ভাঙার ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয় বরং এটি ২০২২ সালের পুরোনো ভিডিও।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে, আল জাজিরার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত একটি পোস্টে একই দৃশ্য সম্বলিত ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ইরানের হরমোজগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটেরিয়ায় থাকা নারী-পুরুষ আলাদা করার দেয়ালটি ভেঙে দিয়েছিল। পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর সারা দেশে চলমান বিক্ষোভের অংশ হিসেবে তারা এই প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এটি সে সময়েরই দৃশ্য।

Screenshot: X.

ওই সময় একই তথ্য অন্যান্য গণমাধ্যমেও (,) পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইরানের কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি ইরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ কর্তৃক বাধ্যতামূলক পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তেহরানে আটক হন। আটকের পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনা ইরানে নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটায় এবং সারা বিশ্বে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।

সুতরাং, ২০২২ সালের ইরানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ বিভাজনকারী দেয়াল ভাঙার একটি ভিডিও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img