আন্তর্জাতিক আলাদতে কথিত মামলায় শেখ হাসিনা নির্দোষ প্রমাণিত দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি ‘আন্তর্জাতিক আদালতে প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনা নির্দোষ’ শিরোনামে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে। 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)৷

ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্তর্জাতিক আদালতে কথিত মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দোষ প্রমাণিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান-বাংলাদেশ সামিট মিটিংয়ের অংশগ্রহণের ভিডিও এবং একটি ভিন্ন ঘটনার অডিও যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে যুক্ত ভিডিও ও অডিও অংশগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

ভিডিও যাচাই 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র এপি এর ভিডিও আর্কাইভ বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেল AP Archive এ ২০১৫ সালের ০৩ আগস্ট ‘Hasina meets counterpart Abe to discuss economic assistance’ শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত ভিডিও ফুটেজের অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Comparison: Rumor Scanner 

ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৬ মে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শিনজো আবে টোকিওতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ভিডিওটি উক্ত চুক্তি স্বাক্ষর ও বৈঠকের চিত্র। 

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘Japan-Bangladesh Summit Meeting’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি যৌথ বিবৃতি থেকেও একই তথ্য জানা যায়। 

অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও ফুটেজটির সাথে আন্তর্জাতিক আদালতে শেখ হাসিনার নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। 

অডিও যাচাই 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৭ জুলাই ‘‘শেখ হাসিনা গুলির নির্দেশ দেননি’ তার আইনজীবী’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের অডিও ক্লিপের একটি অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর অডিও ক্লিপের মিল রয়েছে। 

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০০:০৬ থেকে ০০:৩৬ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশের অডিও ক্লিপ আলোচিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

Screenshot: YouTube 

প্রতিবেদনটির এ অংশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আমির হোসেন জানান, এ দুজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার লিখিত আবেদন করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। আইনজীবী আমির হোসেন আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আলাদতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদ এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্সের ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিনসহ তিন আইনজীবী ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর এ অভিযোগ দায়ের করেন।

শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের স্বাধীন তদন্ত এবং মূল সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ করেছেন আইনজীবী।

তবে, পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আলাদতে এই অভিযোগ গৃহীত হয়েছে কি না ও এটি থেকে মামলা দায়েরের বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ আলাদতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হলে এবং কোনো মামলায় আইসিসি কর্তৃক শেখ হাসিনাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হলে তা জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হওয়ার কথা। তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, আন্তর্জাতিক আদালতে কথিত মামলায় শেখ হাসিনা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে দাবিতে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img