মোল্লা কলেজে হামলা ও সংঘর্ষে হতাহতের দৃশ্য দাবিতে ভারতে নিহত হওয়া ব্যক্তির ছবি প্রচার

২৫ নভেম্বর (সোমবার) ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভয়াবহ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ২৪ নভেম্বর (রবিবার) সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজে মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীদের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের জেরে এ ঘটনা ঘটে। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ হামলা চালায়৷ এতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসবের প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উক্ত সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছেন দাবিতে ফেসবুকে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা ছড়িয়ে পড়ে৷ এসব দাবির পোস্টে উক্ত ঘটনায় হতাহত দাবিতে একাধিক ছবিও সংযুক্ত করা হয়।

উক্ত ঘটনায় হতাহতের ছবি দাবিতে ফেসবুক প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার হামলা, পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি কেউ নিহত হননি এবং হতাহতের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটিও উক্ত ঘটনার নয় বরং, ছবিটি ভারতের উত্তর প্রদেশে শাহি জামা মসজিদ প্রসঙ্গে গত ২৪ নভেম্বর সকালে শুরু হওয়া সংঘর্ষে নিহত হওয়া ব্যক্তির ছবি।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনে ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়। ভারতীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম Clarion India এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ নভেম্বরে “UP: 3 Muslims Killed as Clashes Break Out in Sambhal Over Mosque Survey” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়৷ 

Comparison : Rumor Scanner

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, বিলাল আনসার, নাঈম আহমেদ, নুমান (নাউমান/নিমান) নামের অন্তত তিনজন মুসলিম যুবক ((সর্বশেষ খবরে চারজন)) উত্তর প্রদেশের সাম্ভালের ঐতিহাসিক শাহী জামা মসজিদের সমীক্ষায় হওয়া সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। ভারতের উত্তর প্রদেশে আদালতের নির্দেশে মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদে সমীক্ষা চালাতে গিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা। স্থানীয় লোকজন তাদের বাধা দেন। এর জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। যে মসজিদকে ঘিরে এত সংঘাত, সেটির নাম শাহি জামা মসজিদ। মুঘল আমলে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। দাবি তুলা হয়েছে, একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসস্তূপে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। এসব একই তথ্য জানা যায় শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান, উম্মিদসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকেও৷ শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান এবং উম্মিদের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গতকাল (২৫ নভেম্বর) প্রকাশ হওয়া সংবাদ প্রতিবেদনেও উক্ত ছবিটির সংযুক্তি দেখা যায়৷

পাশাপাশি, প্রচারিত উক্ত ছবিসহ ভারতীয় রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ আজাদ পার্টির প্রধান মুখপাত্র সালমান নিজামিকেও গত ২৪ নভেম্বরে তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে নিন্দা জানাতে দেখা যায়৷

মোল্লা কলেজ হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হলেও এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি কেউ নিহত হননি। তবে আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলার ঘটনায় ৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করলেও পরবর্তীতে দাবিটি থেকে সরে এসেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। একইভাবে সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজ থেকে উক্ত ঘটনায় ৭ জন নিহতের দাবি করা হলেও পরবর্তীতে তারা এটিকে শিক্ষার্থীদের দাবি বলে উল্লেখ করে। ইতিমধ্যে উক্ত ঘটনায় নিহতের গুজব নিয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।

সুতরাং, গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার হামলা, পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতের দৃশ্য দাবিতে ভারতে নিহত হওয়া একজন ব্যক্তির ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img