বেশ কিছুদিন যাবতই বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভারতীয় পণ্য বর্জনের একটি সামাজিক আন্দোলন চলমান রয়েছে। এরই মাঝে গত ২০ মার্চ বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ও দেশীয় পণ্য ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তার গাঁয়ের কাশ্মিরি শাল রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেন৷ এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বয়কটের প্রচারণা আরও বাড়তে থাকে।
এরই ফলশ্রুতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে দাবিতে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ফটোকার্ডের আদলে তৈরি দুটি পৃথক ফটোকার্ড প্রচার করা হয়।
প্রথম আলোর ফটোকার্ড দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ডেইলি স্টারের ফটোকার্ড দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দৈনিক প্রথম আলো কিংবা ডেইলি স্টার দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন প্রচার বিষয়ক কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি। এছাড়াও বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন প্রচার করার দাবিটিও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পৃথক দুটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যলোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, প্রথম আলোর ফটোকার্ড দাবিতে ‘কারা দিল দুবাইয়ের বুর্জ খলিফাতে ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে প্রথম আলোর লোগোর পাশাপাশি এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২২ মার্চ ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও লক্ষ্য করা যায়, উক্ত ফটোকার্ডটি তাদের ‘জীবনযাপন’ বিটের। অপরদিকে ডেইল স্টারের ফটোকার্ড দাবিতে ‘দুবাইয়ে বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৬ মার্চ ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে।
দাবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে প্রথমে প্রথম আলোর ফটোকার্ড দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডে থাকা লোগো এবং তারিখের সূত্র ধরে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে গত ২২ মার্চে প্রকাশিত এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে প্রথম আলোর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২২ মার্চ ‘৬০ বছর বয়সেও যেভাবে তারুণ্য ধরে রেখেছেন নীতা আম্বানি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
ফটোকার্ডটি পর্যলোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে উক্ত ফটোকার্ডের প্রকাশের তারিখ ২২ মার্চ ২০২৪ এবং বিটের নামের (জীবনযাপন) মিল রয়েছে। এছাড়াও উভয় ফটোকার্ডের গ্রাফিক্যাল ডিজাইনেরও মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবি ও ফন্টের সাথে প্রথমআলোর উক্ত ফটোকার্ডের অমিল পরিলক্ষিত হয়।
পরবর্তীতে ডেইলি স্টারের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডে থাকা লোগো এবং তারিখের সূত্র ধরে ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজ ১, ২ এবং ওয়েবসাইটে গত ২৬ মার্চে প্রকাশিত এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ডেইলি স্টার বাংলার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৬ মার্চ ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে জাহাজের ধাক্কায় ধসে পড়েছে সেতু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যলোচনা করে দেখা যায়, ডেইলি স্টারের ফটোকার্ড দাবিতে প্রচারিত আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে উক্ত ফটোকার্ডের প্রকাশের তারিখ ২৬ মার্চ ২০২৪ এবং উভয় ফটোকার্ডের গ্রাফিক্যাল ডিজাইনের মিল রয়েছে। তবে আলোচিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ছবি ও ফন্টের সাথে ডেইলি স্টারের উক্ত ফটোকার্ডের অমিল পরিলক্ষিত হয়।
অর্থাৎ, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ড এডিট করেই আলোচিত ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।
পরবর্তীতে বুর্জ খলিফায় সত্যি ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে কিনা তা জানতে আলোচিত ফটোকার্ডগুলোতে ব্যবহৃত ছবিটি রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানেও আন্তর্জাতিক গণামাধ্যম কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বুর্জ খলিফার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজ পর্যলোচনার মাধ্যমেও এবিষয়ে কোনো তথ্য অথবা ছবি পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত ২২ মার্চ দৈনিক প্রথম আলো ‘৬০ বছর বয়সেও যেভাবে তারুণ্য ধরে রেখেছেন নীতা আম্বানি’ শীর্ষক শিরোনামে এবং ২৬ মার্চ ডেইলি স্টার ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে জাহাজের ধাক্কায় ধসে পড়েছে সেতু’ শীর্ষক শিরোনামে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দুটি পৃথক ফটোকার্ড প্রকাশ করে। সম্প্রতি, উক্ত ফটোকার্ড দুটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে দাবিতে ‘কারা দিল দুবাইয়ের বুর্জ খলিফাতে ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন?’ শীর্ষক শিরোনামে প্রথম আলো এবং ‘দুবাইয়ে বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন’ শীর্ষক শিরোনামে ডেইলি স্টারের ফটোকার্ডের আদলে পৃথক দুটি ফটোকার্ড তৈরি করে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তাছাড়া, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দুবায়ের বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের কোনো বিজ্ঞাপন প্রচারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন প্রচারের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো এডিটেড বা বিকৃত।