সম্প্রতি, তুরস্কে হওয়া ভূমিকম্পকে ঘিরে রুটি হাতে একজন বয়স্ক ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে ‘উক্ত ব্যক্তিটির তুরস্কে সংঘটিত ৪০ সেকেন্ডের ভূমিকম্পের আগে ৩ টি বাড়ি ছিল। কিন্তু ভূমিকম্পের ৪০ সেকেন্ড পরে ব্যক্তিটি তিনটি রুটিরও মালিক না বরং অন্যের দেওয়া রুটি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।’

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।

টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
ভিডিওগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তুরস্কের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে তোলা ছবি দাবিতে রুটি হাতে একজন বয়স্ক ব্যক্তির যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে তা সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর তুরস্কে সংঘটিত আরেকটি ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে তোলা ছবি৷ এছাড়া ছবির ব্যক্তিটি সম্পর্কে প্রদত্ত তথ্যটিও কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে তুরস্ক ভিত্তিক গণমাধ্যম Aksam এ ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর ‘How long did the Düzce earthquake last? What was the intensity of the 12 November 1999 Düzce earthquake?‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর তুরস্কের ডুজসে ও বোলু শহরে ৭ দশমিক ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ এই ভূমিকম্পে ডুজসে শহরে ৭১০ জন ও বোলুতে ৪৮ জন মারা যান। এই প্রতিবেদনটিতেই সেই ভূমিকম্পের ছবি হিসেবে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

পাশাপাশি Ensonhaber নামে তুরস্ক ভিত্তিক আরেকটি গণমাধ্যমে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ‘5.9 magnitude earthquake in Düzce reminded 1999 earthquake‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

এছাড়া Haber Global নামে তুরস্কের আরেকটি ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ‘What happened in the 12 November 1999 Düzce Earthquake? ‘Everywhere was destroyed, everywhere was dark…‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবিটির শিরোনামে এটিকে ডুজসে শহরে হওয়া ভূমিকম্পের অন্যতম একটি প্রতীকী ছবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখিত গণমাধ্যমগুলো ছাড়াও তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরী ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ওয়েবসাইট AFAD এ ২০২২ সালের ১১ নভেম্বরও আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

পাশাপাশি আরও অধিকতর অনুসন্ধানে ছবিটির মূল ফটোগ্রাফার Abdurrahman Antakyali এর ইনস্টাগ্রাম একাউন্টেও ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বরে প্রকাশ করা আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

তুর্কি ভাষায় লেখা ছবিটির শিরোনাম ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেখা যায়, ফটোগ্রাফার সেখানে লিখেন, ‘It’s been 15 years since the photojournalist took this photo in Düzce / Kaynaşlı… I didn’t even get his name because of the rush to send the films I shot to Ankara immediately. I was in turmoil at that moment. are we in print?” I was able to learn his name when he called. Rest in peace Uncle Ashraf…’
অর্থাৎ, ফটোগ্রাফার ছবিটি তুলেছেন ১৫ বছর হতে চলেছে। তিনি ছবিটি তুলেছিলেন তুরস্কের ডুজসে শহর থেকে। সে সময় ফটোগ্রাফারের কাজের তাড়া থাকায় তিনি ছবির ব্যক্তিটির নামও জানার সুযোগ পাননি। তবে পরে তিনি ব্যক্তিটির নাম জানতে পেরেছিলেন যে, উক্ত ব্যক্তির নাম আশরাফ।
অর্থাৎ, রুটি হাতে বয়স্ক ব্যক্তির ছবিটি তুরস্কে সম্প্রতি সংঘটিত ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ের নয়। অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তিটিকে তিনটি বাড়ির মালিক ছিলেন দাবিতে প্রচার করা হলেও এই দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম। এছাড়া উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কেও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মূলত, গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সিরিয়ার সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ শহরের কাছে ৭.৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এতে তুরস্ক-সিরিয়া দুইটি দেশই প্রাণহানি সহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়। এরই প্রেক্ষিতে রুটি হাতে একজন বয়স্ক ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে ‘উক্ত ব্যক্তিটির তুরস্কে সংঘটিত ভূমিকম্পের আগে ৩ টি বাড়ি ছিল। কিন্তু ভূমিকম্পের পরে ব্যক্তিটি তিনটি রুটিরও মালিক না।’ কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত ব্যক্তির ছবিটি তুরস্কের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ের নয় বরং এটি ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর তুরস্কেরই আরেকটি শহর ডুজসেতে সংঘটিত ভূমিকম্পের একটি ছবি৷ এছাড়া রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে, আলোচিত ছবির ব্যক্তিটি সম্পর্কে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যের স্বপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বয়ং ছবিটির ফটোগ্রাফারই বৃদ্ধ ব্যক্তিটি সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানেন না বলে তার(ফটোগ্রাফার) ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট হতে দেওয়া এক পোস্টে নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং, তুরস্কের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ের ছবি দাবিতে কাল্পনিক ও বানোয়াট গল্প জুড়ে দিয়ে রুটি হাতে একজন বয়স্ক ব্যক্তির পুরোনো ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Aksam: How long did the Düzce earthquake last? What was the intensity of the 12 November 1999 Düzce earthquake?
- Haber Global: What happened in the 12 November 1999 Düzce Earthquake? ‘Everywhere was destroyed, everywhere was dark…
- Ensonhaber: 5.9 magnitude earthquake in Düzce reminded 1999 earthquake
- AFAD: The earthquake drill, which is on the agenda of the country, will be held on Wednesday, November 12 at 18:57. SHOCK-SHUT-HOLD
- Photographer’s Instagram: https://www.instagram.com/p/vShMC9O-v4/?igshid=YmMyMTA2M2Y=