নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে সম্প্রতি র‍্যাব কর্তৃক খুলনা থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, ‘জীবিত অবস্থায়ই উদ্ধার ইলিয়াস আলী’ শীর্ষক দাবিতে একটি সংবাদ প্রতিবেদনধর্মী ভিডিও প্রচারিত হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন লেখা অবধি টিকটকে একটি ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার বারেরও বেশি। এছাড়াও ভিডিওটিতে প্রায় ৮ হাজার বারেরও বেশি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি ১ হাজার বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে র‍্যাব খুলনা থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেনি। এছাড়া, বিএনপি কিংবা ইলিয়াস আলীর পরিবারের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত তার সন্ধান পাওয়ার দাবি করা হয়নি।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে সংবাদ পাঠিকার   কন্ঠে বলতে শোনা যায়, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও রহস্যময় গুমকাণ্ডের অবসান হলো আজ। ২০১২ সালে রাজধানী ঢাকার বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস আলীকে র‍্যাবের একটি বিশেষ কমান্ডো ইউনিট জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। খুলনার প্রত্যন্ত দিঘলিয়া উপজেলার চরের মধ্যভাগে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত চিনি কলের ভূগর্ভস্থ ঘর থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হতেই দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে একে রাষ্ট্রীয় গুমের স্বীকৃতি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।”

ভিডিওটিতে আরও বলা হয়, “র‍্যাব-৭ এর গোয়েন্দা বিভাগের কাছে গোপন তথ্য আসে যে খুলনার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একটি পুরনো কারখানার ভেতরে অনেক দিন ধরে অজ্ঞাত এক বন্দীকে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর র‍্যাবের হেডকোয়ার্টার থেকে অনুমোদন নিয়ে ‘অপারেশন রিভাইভ’ (Operation Revive) নামের একটি বিশেষ উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়।”

প্রাথমিকভাবে আমাদের পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে দাবি করা তথ্যে কিছু অসঙ্গতি আছে বলে হয়েছে। যেমন-

ভিডিওটিতে র‍্যাব-৭ কর্তৃক ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। র‍্যাব-৭ মূলত চট্টগ্রাম অঞ্চলে (র‌্যাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী – চট্রগ্রাম, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি) তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। ভিডিওটিতে ইলিয়াস আলীকে খুলনা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই র‍্যাব-৬ এর বিষয় আসার কথা, কেননা র‍্যাব-৬ মূলত খুলনা অঞ্চলে (র‌্যাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী -খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, মাগুড়া, ঝিনাইদহ ও গোপালগঞ্জ) তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। 

অন্যদিকে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদনমূলক ভিডিওটিতে র‍্যাবের সাবেক মুখপাত্র আল মঈন এর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যিনি বর্তমানে বাহিনীরটির দায়িত্বে নেই।

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সম্প্রতি খুলনায় ‘অপারেশন রিভাইভ’ (Operation Revive) নামে র‍্যাবের কোনো উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হওয়ার সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এর ওয়েবসাইটেও তাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে ইলিয়াস আলী সম্পর্কিত আলোচিত এমন কোনো অভিযানের তথ্য পাওয়া যায়নি। বিএনপি কিংবা ইলিয়াস আলীর পরিবারের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত তাকে জীবিত ‍উদ্ধার করা হয়েছে এমন দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

তবে, মূলধারার সংবাদমাধ্যম যায়যায়দিন এর ওয়েবসাইটে গত ৬ জুলাই প্রচারিত ‘ভারতের কারাগারে ইলিয়াস আলী: এম এ মালেক’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিদেনটিতে বলা হয়, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক দাবি করেছেন, নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে শেখ হাসিনা সরকার গুম করেছে। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী সরকারের কাছে ‘আতঙ্ক’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন এবং সম্ভবত তাকে ভারতের কোনো কারাগারে রাখা হয়েছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় নিজ বাড়িতে বালাগঞ্জ উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় এম এ মালেক বলেন, “ইলিয়াস আলী ছিলেন সরকারের চোখে ‘এক আতঙ্ক’। তাই তাকে গুম করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, একদিন ইলিয়াস আলী জনতার মাঝে ফিরে আসবেন।’ 

অর্থাৎ, প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি ইলিয়াস আলীর সর্বশেষ অবস্থা নিশ্চিত করে বলেননি। তিনি বলেছেন “সম্ভবত তাকে ভারতের কোনো কারাগারে রাখা হয়েছে”

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। 

সুতরাং, নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে খুলনা থেকে র‌্যাব উদ্ধার করেছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img