জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর কথিত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টের বরাত দিয়ে একাধিক দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এমন একটি পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “সংবিধানে যেহেতু পি-আর নাই ২৯ সালের আগে নির্বাচনের কথাও সংবিধানে নাই।”

উক্ত দাবির কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে।
একই দাবির ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সংবিধান নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ এমন কোনো মন্তব্য করেননি এবং সূত্রপাত হিসেবে প্রচার হওয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিও তার নয় বরং, অর্থের বিনিময়ে ভেরিফাইড করে ব্লু ব্যাজ নিয়ে ভুয়া এই অ্যাকাউন্টটি পরিচালিত হচ্ছে যার সাথে হাসনাতের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে হাসনাত আবদুল্লাহর ইংরেজি অক্ষরের নামে চালু থাকা ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে গণমাধ্যমেও তাকে এমন কোনো মন্তব্য করার তথ্য মেলেনি।
দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে ‘হাসনাত আব্দুল্লাহ’ নামে একটি ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নজরে আসে রিউমর স্ক্যানারের। এই অ্যাকাউন্টে গত ২৩ আগস্ট সকালে প্রকাশিত উক্ত দাবি সম্বলিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এই পোস্টটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ বার শেয়ার হয়েছে। পোস্টের কমেন্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, অসংখ্য নেটিজেন এই মন্তব্যটি হাসনাতের ভেবে নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অ্যাকাউন্টটির প্রোফাইলে হাসনাতের ছবি এবং ব্লু ভেরিফাইড চিহ্ন থাকার দরুন সহজেই অনেকে এটিকে হাসনাত আবদুল্লাহর অ্যাকাউন্ট হিসেবে ধরে নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ব্লু ভেরিফাইডটি যে অর্থের বিনিময়ে করা হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে অ্যাকাউন্টে Subscription অপশনটি দেখে। সাধারণত অর্থের বিনিময়ে ভেরিফাইড করিয়ে নিলে এই অপশনটি প্রদর্শিত হয়। মেটার নিয়ম অনুযায়ী, মাসিক প্রায় ১২ ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪৭০ টাকা) বিনিময়ে কোনো অ্যাকাউন্ট ব্লু ভেরিফাইড করা যায়। পাশাপাশি আরো কিছু সুবিধাও পাওয়া যায়।

হাসনাতের নামে চালু থাকা কথিত অ্যাকাউন্টটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২১ মার্চ অ্যাকাউন্টটি চালু করা হয়৷ আর্কাইভের সময় অ্যাকাউন্টটির অ্যাবাউট সেকশনে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

চালুর পর থেকে অনিয়মিতভাবে পোস্ট করা হলেও গত আগস্টের শুরু থেকে নিয়মিত পোস্ট করা হচ্ছে এই অ্যাকাউন্টে। নির্বাচনসহ সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে বেশ সরব অ্যাকাউন্টটি। নেটিজেনদের কাছেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে অ্যাকাউন্টটি। ভাইরাল হচ্ছে বিভিন্ন পোস্টও। যেমন, ডাকসুর নির্বাচন স্থগিত এবং পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ইস্যুতে গত রাতে অ্যাকাউন্টটি থেকে দেওয়া একটি পোস্ট এখন পর্যন্ত ৮ হাজারের অধিক বার শেয়ার হয়েছে।
অ্যাকাউন্টটির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত রিউমর স্ক্যানারকে জানান, এই অ্যাকাউন্টটি হাসনাতের নয়।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, “ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দুষ্কৃতিকারীরা এটা খুলে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে।”
হাসনাত বলছেন, “যারা আমার নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
সুতরাং, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নামে পরিচালিত ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ভুয়া।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis
- The Daily Campus: হাসনাত আবদুল্লাহর নামে ‘ভুয়া’ ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট খুলে হাসনাতকেই ব্লক